আ.লীগের ৫ প্রার্থী ঠেকাতে ৭ বিদ্রোহী
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
জমে উঠেছে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থণা করছেন।
পাঁচটি ইউনিয়নের পাড়া, মহল্লা ও গ্রামের হাট-বাজার পোস্টার-হ্যান্ডবিলে ছেয়ে গেছে। একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মৌখিক অভিযোগ করলেও এখনও পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেননি কেউ। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত ৫ প্রার্থীকে ঠেকাতে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ৭ জন।
নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, আগামী ৩১ জানুয়ারি ৬ষ্ঠ ধাপে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে- মির্জাপুর, হাদিরা, নগদাশিমলা, আলম নগর ও ধোপাকান্দি। এ পাঁচটি ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে ৭জন বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। এছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ওই দলের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মির্জাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন- গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম লাভলু। এখানে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আনারস প্রতীকে স্বতন্ত্র হিসেবে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আবু ফারুক মিঞা। এ ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা প্রতীকের মোখলেছুর রহমান মোখলেছ। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৭ হাজার ৮৬৪জন।
আলমনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আব্দুল মোমেন। মনোনয়ন না পেয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান লুৎফর। এ ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত মোহাম্মদ এহসানুল হক চৌধুরী চশমা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৪ হাজার ৮৮৮জন।
হাদিরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আমিনুল ইসলাম নিক্সনের স্ত্রী বিলকিছ জাহান। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দুই জন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তারা হচ্ছেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক সেলিম আজাদ (আনারস প্রতীক) এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ছেলে আলমগীর হোসেন (ঘোড়া প্রতীক)। এ ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবুবকর সিদ্দিক চশমা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ২০ হাজার ৮৮জন।
নগদাশিমলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. হোসেন আলী। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে এ ইউনিয়নে আ’লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে নির্বাচন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা আঙুর। এ ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির প্রার্থী খন্দকার শহীদুল আলম লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ২৫ হাজার ৯৮৩জন।
ধোপাকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই মো. সিরাজুল ইসলাম। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দু’জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তারা হচ্ছেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আব্দুল হাই (আনারস প্রতীক) এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন (ঘোড়া প্রতীক)। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৭ হাজার ৮৬৪জন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হালিমুজ্জামান তালুকদার বলেন, ৫ ইউপিতে এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। প্রতিটি প্রার্থীকে যাচাই বাছাই করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছেন। দলের কর্মী হিসেবে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে হবে। যে সেটা করবে না দলের সাংবিধানিক নিয়ম মেনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রোববার দলীয় সভা ডাকা হয়েছে। সেই সভায় বিদ্রোহীদের বহিষ্কারের বিষয়ে সুপারিশ করা হবে। জেলা আওয়ামী লীগ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।
গোপালপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এখনও পর্যন্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোন লিখিত অভিযোগ করেননি। আগামি ৩১ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ করতে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কাওছার/টিপু
আরো পড়ুন