ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

আগাম আলু চাষে লোকসানে চাষিরা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৮, ২২ জানুয়ারি ২০২২  
আগাম আলু চাষে লোকসানে চাষিরা

আগাম আলু চাষ করে লোকসানে পড়েছে জয়পুরহাটের আলু চাষিরা। দাম কম থাকায় আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। আর আলুর আমদানি বেড়ে যাওয়ায় লোকসান নয়, লাভ কমেছে কৃষকের- দাবি কৃষি বিভাগের।   
                              
সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া, দুর্গাদহ, আক্কেলপুর উপজেলার ভিকনি উত্তরপাড়া মাঠসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠে চাষিরা মহিলা শ্রমিক নিয়ে আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় জয়পুরহাটে এবার ৪০ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। অধিক লাভের আশায় কৃষকরা এবার আগাম আলু চাষ করেছে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে। 

মৌসুমের শুরুতে দাম বেশি হলেও বর্তমানে আলুর বাজারে ধস নেমেছে। জেলার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে গ্র্যানোলা জাতের আলু ১৫০, এ্যাস্টেরিক ও ক্যারেজ ৩৫০ এবং দেশি পাকরি জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা মণ দরে। আগাম চাষ করায় বিঘা প্রতি ফলন হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ মণ। যার উৎপাদন খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সার কীটনাশকের দাম বেশি হলেও আলুর দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। 

৩৩ শতক জমিতে আগাম জাতের মিউজিকা আলু চাষ করেছেন আক্কেলপুর উপজেলার ভিকনি গ্রামের আলু চাষি রাকিব হোসেন। তিনি বলেন, রোপণের ৬০ দিন বয়সে আমি আলু তুলেছি। জমিতে ফলন হয়েছে ৭০ মণ। ফসলের উৎপাদন খরচ হয়েছে ২৩ হাজার টাকা। ১৫০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করেছি সাড়ে ১০ হাজার টাকা। তাতে লোকসান হয়েছে প্রায় ১১ হাজার টাকা। মাঠে আরও আলু আছে। দশ-পনেরো দিন পরে সেগুলো তুলতে হবে। কিন্তু বাজার দিন দিন যেভাবে কমে যাচ্ছে তাতে লোকসান গুনতে হবে আরও মোটা অংকের। সেই চিন্তাই এখন আর রাতে ঘুম আসে না।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার ইকরগাড়া গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, আলু রোপণ থেকে শুরু করে নিড়ানি, বাঁধানো এবং বহনসহ যাবতীয় কাজ করেছি আমি এবং আমার পরিবারের লোকজন। বাহিরের শ্রমিককে নিতে হয়নি। তাই অন্যের থেকে বিঘাপ্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ কম হয়েছে। এক বিঘা জমির আলু তুলেছি। ফলন হয়েছে ৬৬ মণ। ৩১০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে হাজার দুয়েক টাকা লাভ হয়েছে।

জয়পুরহাট নতুন হাটের আলু ব্যবসায়ী আলামিন বলেন, বাজারে এখন আগাম জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। এসব আলু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড়বড় শহরের মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। কাঁচা মালের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না। তাই কখনও বাড়তে আবার কখনও কমতেও পারে। আমদানির উপর তা নির্ভর করবে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৪০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সদর উপজেলায় ৭ হাজার ১০০ হেক্টর, পাঁচবিবিতে ৭ হাজার হেক্টর, কালাইয়ে ১১ হাজার ১০০ হেক্টর, ক্ষেতলালে ৯ হাজার হেক্টর এবং আক্কেলপুরে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কয়েক হেক্টর জমিতে আলুর চাষ কম হয়েছে।   

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে এখন আলুর দাম তুলনামূলক কম কারণ গত বছরের যে সমস্ত আলু রয়েছে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে। এগুলো শেষ হলে আমরা আশা করি কৃষকরা যথাযথ আলুর দাম পাবেন।

শামীম কাদির/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়