ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মর্জিনা খালার লবণ, মরিচের জীবন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ২৫ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৪:৩৭, ২৫ জানুয়ারি ২০২২
মর্জিনা খালার লবণ, মরিচের জীবন

খালার হাতের কালাইরুটির স্বাদই আলাদা! এই স্বাদ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় লবণ, মরিচ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি ঝালভর্তা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনে গিয়ে ‘মর্জিনা খালা’র কথা বললে এক নামে যে কেউ চিনিয়ে দেবে খালার দোকান।

না, খালার দোকানে নেই আলোর বাহার, নেই চাকচিক্য। তবে গ্রাহক আছে যথেষ্ট, আছে সুনাম। সন্ধ্যার পর দোকানে ভিড় জমে ওঠে ঝালপ্রেমীদের। যারা খাবারে ঝাল পছন্দ করেন তাদের কাছে মর্জিনা খালার ঝালভর্তা দিয়ে কালাইরুটি সবসময়ই স্পেশাল।

তীব্র শীতের রাত। খালা একমনে রুটি বানাচ্ছিলেন। দম ফেলার যেন সময় নেই। চুলার আগুনের হলুদ রঙের আভা ছড়িয়ে পড়েছে খালার চোখে-মুখে। সেখানে ক্লান্তির ছাপ নেই। কথা হয় খালার সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় ২০ বছর আগে স্বামী তসলিম হোসেন মারা যাওয়ার পর সংসারে দেখা দেয় আর্থিক সঙ্কট। তখন সংসারের হাল ধরেন তিনি। বেছে নেন কালাইরুটি বানিয়ে বিক্রির কাজ।

মর্জিনা খালার সংসারে দুই ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে সালেক প্রতিবন্ধী। ছোট ছেলে রাজু কখনও রিকশা চালায়, কখনও বারো ভাজা, বাদাম বিক্রি করে। কিন্তু তাতে আর কত টাকাই-বা আয় হয়। দিন শেষে তাকেই নামতে হয় পথে। কথাপ্রসঙ্গে খালা আরো জানালেন, অনেক চেষ্টা করেছেন ছোট ছেলের জন্য স্থায়ী কিছু করার। কিস্তিতে টাকা তুলে ছেলেকে দিয়েছেন। কিন্তু সেই টাকা গচ্চা গেছে। ছেলে ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেনি। এখন কালাইরুটি বিক্রি করে কিস্তির টাকা শোধ করছেন তিনি।

মর্জিনা খালা সংসার টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। জীবনের অনেক চরাই-উৎড়াই দেখেছেন। তবে দমে যাননি। এখন দুশ্চিন্তা একটাই- যেখানে বাস করছেন সেই জামি রেল কর্তৃপক্ষের। উঠিয়ে দিলে কোথায় যাবেন তিনি জানেন না। 

শহরের পৌর এলাকার বাসিন্দা আসাদ হোসেন। দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে তৃপ্তি নিয়ে কালাইরুটি ঝাল ভর্তা দিয়ে খাচ্ছিলেন। আসাদ বললেন, রুটির দাম ২০ টাকা হলেও স্বাদ ভালো। যে কারণে তিনি প্রায়ই খালার দোকানে আসেন। বিশেষ করে লবণ আর মরিচ বেটে খালা যে ঝালভর্তা বানান তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ আসাদ।   
 

শিয়াম/তারা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়