ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এইচএসসি পরীক্ষায় আলো ছড়িয়েছে ৬ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৭:০৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
এইচএসসি পরীক্ষায় আলো ছড়িয়েছে ৬ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী

কোনো প্রতিকূলতাই আটকে রাখতে পারেনি তাদের। চোখের আলো না থাকলেও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সাফল্যের আলো ছড়িয়েছেন ৬ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। জীবন সংগ্রামী এই ছয় শিক্ষার্থী পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্ট থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। ব্রেইল পদ্ধতিতে শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তারা। 

সাফল্য পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন সিরাজগঞ্জের সয়েদাবাদের বাওইতারা গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে খোকন আলী। তিনি এবারের এইচএসসি পরীক্ষা জিপিএ- ৪.৪২  পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এছাড়া সিরাজঞ্জের উল্লাপাড়ার বাঙালাপ্রতাপ গ্রামের মুন্তাজ আলীর ছেলে রাকিব হাসান পেয়েছেন জিপিএ-৪.৩৩, পাবনার নাজিরপুর গ্রামের মোয়াজ্জেম প্রামানিকের ছেলে রুহুল আমিন পেয়েছেন জিপিএ-৪.৬৭, ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বুজিয়াম গ্রামের ইউনূস আলীর ছেলে তোফায়েল মিয়া পেয়েছেন জিপিএ-৪.০৮, রাজশাহীর শাহমখদুমের পবা নতুনপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম পেয়েছেন জিপিএ- ৪.০৮, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সৎসঙ্গ দেরুলি গ্রামের কানাই মন্ডলের ছেলে গলক মন্ডল পেয়েছেন জিপিএ- ৪.৩৩। 

রাকিব হাসান পাবনা শহীদ বুলবুল কলেজ থেকে বাকিরা দোগাছী কলেজ কেন্দ্র থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।

পাবনা সদর উপজেলার সিঙ্গা মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, ‘জন্মগতভাবে তারা দৃষ্টিপ্রতিবন্দ্বী।  তবে তাদের মধ্যে সব বাধা ও প্রতিকূলতা জয় করার প্রবল ইচ্ছা শক্তি রয়েছে। তারা সোনালী ভবিষ্যৎ অর্জনের যে স্বপ্ন দেখছে, তা বাস্তবায়নে কাজ করছে মানবকল্যাণ ট্রাস্ট। ব্রেইল পদ্ধতিতে শ্রুতি লেখকের সাহায্যে তারা শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ্রহণ করে। কিন্ত আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের জন্য সেই সুযোগ নেই। সরকার যদি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্রেইল পদ্ধতি চালু করে তাহলে প্রতিবন্ধীরাও শিক্ষা ক্রার্যক্রমে অংশ নিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারবে।’

উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, ‘আমাদের এমন ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জনের পেছনে আমাদের মানবকল্যাণ ট্রাস্টের অবদান সবচেয়ে বেশি। তাদের সঠিক দিকনির্দেশনায় আমরা সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি। এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য আমরা গর্বিত। ভবিষ্যতে ভাল মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাই।’

রুহুল আমিন বলেন, ‘অন্ধ হয়ে জন্ম নেওয়ার পর থেকে সমাজের লোকজন আমাদের অবহেলার দৃষ্টিতে দেখতেন। আমরা পরিবারের জন্য বোঝা-এমন ভাবা হতো। কিন্তু আমরা পরিবারের বোঝা হতে চাইনি। নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চাই। আমরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের করে  দেশ ও মানুষের জন্য বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করতে চাই। সরকারের আর্থিক ও প্রতিষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতা পেলে সাফল্য অর্জন করে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবো।’

মানবকল্যাণ ট্রাস্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এই ট্রাস্টে ৫৫ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, ১২ জন শারীরিক, ১৮ জন বাক প্রতিবন্ধীসহ ১৪৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়াসহ সব দায়-দায়িত্ব বহন করছে আবাসিক এই প্রতিষ্ঠানটি। 

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা এখানে আসে। এদের মধ্যে প্রাথমিকের গন্ডির বাইরে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনকারীরাও রয়েছে। এছাড়া ৫০ জন পবিত্র কোরআনে হাফেজ ও ২৫ জন শিক্ষার্থী এমএ পাশ করে বিভিন্ন কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। 

সরকারের সহযোগিতা পেলে আরো ভালোভাবে প্রতিষ্ঠানটি চালানো সম্ভব বলে মনে করেন  মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন।

শাহীন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়