ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সুতাং নদীর পানি দূষণে হুমকিতে জনজীবন

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৯, ৭ মার্চ ২০২২   আপডেট: ১৮:৫১, ৯ মার্চ ২০২২
সুতাং নদীর পানি দূষণে হুমকিতে জনজীবন

ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে হবিগঞ্জের সুতাং নদী। শিল্প কারখানার বর্জ্যপদার্থের কারণে পানি দূষিত হয়ে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পানির রঙ কুচকুচে কালো হয়ে গেছে। এতে প্রতিনিয়তই অসুস্থ হচ্ছেন নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর হাজার হাজার বাসিন্দা। শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ থেকে শুরু করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। নদীতে এখন আর মাছ নেই। নদীর বিষাক্ত পানি পান করে মারা যাচ্ছে গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগি।

জানা যায়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে সুতাং নদীর উৎপত্তি। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ওপর দিয়ে বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করেছে নদীটি। পরে শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে লাখাই উপজেলার ওপর দিয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে মিশেছে সেটি। 

অলিপুর শিল্প এলাকা থেকে বয়ে গেছে শৈলজুড়া ভাটি খাল। অলিপুর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার অতিক্রম করে এ খালের সংযোগ হয়েছে গোড়াবই গ্রামে সুতাং নদীতে। ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন শিল্প কারখানার বিষাক্ত কালো পানি এ খাল দিয়ে সুতাং নদীতে প্রবেশ করছে। 

এক সময় সুতাং নদীতে বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় লোকজন নৌকা নিয়ে দলবেঁধে মাছ ধরেছে। সেই সময়ে শুকনো মৌসুমেও প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এখন এ ধারা পাল্টে গেছে।  

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুরসহ নানা এলাকার শিল্পের বিষাক্ত কালো পানি শৈলজুড়া ভাটি খাল দিয়ে সুতাং নদীতে প্রবেশ করছে। এ কারণে নানা প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত। বর্তমানে শীতকাল আসার আগেই নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। নদীতে মাছ ধরা দূরের কথা, অনেক স্থানে জেগে উঠছে চর। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। শুকিয়ে যাওয়া নদীর চরে লোকজন বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করছে।

অনেকে আবার নদীর পাড় ভরাট করে ঘরবাড়ি তৈরি করছেন। এতে করে নদীর রূপরেখা দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। নদীতে যেটুকু পানি রয়েছে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই নদীপাড়ের লোকজন মাটির নিচ থেকে পাম্পের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে বোরো আবাদসহ নানা ফসল চাষাবাদ করছেন। 

স্থানীয় বাসিন্দা কাজল মিয়া, সিরাজ মিয়া, সিদ্দিক মিয়া জানান, এক সময় নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এখন সেই তুলনায় মাছ পাওয়া যায় না। পরিকল্পিতভাবে খনন না হওয়ায় শীতকাল আসামাত্র নাব্যতা সংকটে পড়ে শুকিয়ে যায় এ নদীটি। নদীতে চর জেগেছে। সেখানে স্থানীয় কৃষকরা কৃষি কাজ করছেন। শিল্প বজ্যের কারণে পানি দূষিত হওয়ায় কৃষকরা পাম্পের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে বোরো ধান চাষ করছেন। 

নূরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মুখলিছ মিয়া বলেন, নদীতে পলি পড়ে ভরাট হচ্ছে। তার সঙ্গে বিভিন্ন ‍শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পদার্থের কালো পানি নদীতে প্রবেশ করছে। এ অবস্থা থেকে নদীটি রক্ষা করতে জরুরি ভিত্তিতে খনন করা প্রয়োজন। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সুতাং নদীসহ এর আশপাশের খালগুলোর পানি বর্জ্যের কারণে কুচকুচে কালো হয়ে গেছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে গেছে। বাপা নদী রক্ষায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নদীর পানি খেয়ে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি মারা যাচ্ছে। শ্বাসকষ্ট চর্মরোগসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নদীপাড়ের মানুষজন।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহানেওয়াজ তালুকদার বলেন, প্রকল্প আসলে দ্রুত নদী খনন করা হবে। নদী দূষণমুক্ত রাখতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। এখানে আমরা ছাড়াও জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্ব রয়েছে। যাই হোক সবাইকে একসঙ্গে মিলে নদী রক্ষায় কাজ করে যেতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর হবিগঞ্জ জেলা উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, নদীর পরিবেশ রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, সুতাং নদী রক্ষায় কার্যক্রম চলছে। দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সরেজমিনে দেখার পর খনন ও দখল, দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামুন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়