ফেনীতে শিক্ষার্থীদের গাইড বই কিনতে বাধ্য করছেন শিক্ষক
ফেনী সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের সিলেবাসে গাইড বইয়ের নাম যুক্ত করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম। গাইড বই প্রকাশকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তিনি কাজটি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি শিক্ষা নীতিমালা ও আইন পরিপন্থী বলে জানিয়েছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের সিলেবাস প্রকাশ করে ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুল। সিলেবাসে ষষ্ঠ শ্রেণীর জন্য ‘একের ভিতর সব’, মোহাম্মদ উল আলম আকরামুজ্জামান এবং মো. আবু বক্কর রচিত ‘আধুনিক ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ এবং জাহাঙ্গীর আলম ও পরিতোষ দেব রচিত ‘Rapid Learner communicative English grammar and Composition with Model Questions’ বইগুলোর উল্লেখ রয়েছে। একইভাবে সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর জন্য অক্ষরপত্র প্রকাশনীর গাইড বইয়ের উল্লেখ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বইগুলো বাধ্য হয়ে কিনছেন। ক্লাসভেদে বইগুলো কিনতে একজন শিক্ষার্থীকে ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। জানা গেছে, স্কুলের প্রায় তিন হাজার ছাত্রছাত্রীকে এসব বই কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ২৭ লাখ টাকা। অথচ ২০২১ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত পাঠ্যপুস্তকের নামের তালিকায় এই বইগুলোর নাম নেই।
স্কুলের নবম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর মা বিবি আয়েশা জানান, স্কুলের সিলেবাস অনুসারে দুটি গাইড বই কেনার জন্য শ্রেণীশিক্ষক আমাদের বলেছেন। আমরা সন্তানের পড়ালেখার স্বার্থে বই কিনেছি। একই কথা বলেছেন অষ্টম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর বাবা মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন। ‘গাইডগুলো কেনার জন্য আমাদের স্কুল থেকে তাগাদা দিচ্ছে’ বলেন এই অভিভাবক।
অন্য এক অভিভাবক আনোয়ার হোসেন জানান, ফেনীর অন্যান্য হাই স্কুলে ৫ থেকে ৬টি বিষয়ে প্রতিদিন ক্লাস হলেও ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলে মাত্র ২টি বিষয় এখন পড়ানো হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। স্কুলের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ‘প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে সবাই ভয় পান’ উল্লেখ করে এই অভিভাবক বলেন, ‘শুনেছি প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির ঘনিষ্ঠ লোক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের এক শিক্ষক জানান, করোনার অজুহাতে গত বছর একসঙ্গে ১৯ জন শিক্ষককে ছাঁটাই করা হয়েছে। শিক্ষক সংকটের কারণে প্রতিদিন এখন দুই বিষয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া স্কুলের বিভিন্ন খাতে চরম অনিয়ম করা হচ্ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই।
এ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলামের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি ‘কিছুটা অনিয়ম হয়েছে’ উল্লেখ করে বলেন, ‘সিলেবাসে সহায়ক হিসেবে গাইড বইয়ের নাম দেওয়া ঠিক হয়নি। বিষয়টি মিসটেক হয়েছে। আগের সিলেবাস বাদ দিয়ে নতুন সিলেবাস শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেব। বিষয়টি আমরা স্কুলের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জানিয়েছি।’
বিষয়টি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্লাহর দৃষ্টিতে আনা হলে তিনি বলেন, স্বল্প জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা এমন করতে পারে। সরকার পাঠ্যপুস্তক নির্ভরতা বাড়াতে প্রতিবছর বিনামূল্যে বই বিতরণ করছে। সেখানে নির্দিষ্ট বই থেকে পাঠ্যসূচি দিয়ে সিলেবাস তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (এনসিটিব) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, এনসিটিবি আইনে পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা আছে আমাদের প্রণীত বই ছাড়া অন্য কোনো বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহায়ক বই হিসেবে বাধ্যতামূলক করতে পারবে না। করলে সেটি আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন হবে।
সৌরভ/তারা
আরো পড়ুন