ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বরগুনায় ৫ বছরের সর্বোচ্চ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত

ইমরান হোসেন, বরগুনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৭, ৯ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ২১:২৫, ৯ এপ্রিল ২০২২
বরগুনায় ৫ বছরের সর্বোচ্চ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত

বরগুনা সদর হাসপাতালে শনিবার (৯ এপ্রিল) সকাল থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নারী-শিশুসহ ৪৭ জন ভর্তি হয়েছে। আর সপ্তাহে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭৪ জন। যা বরগুনায় ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড ভেঙেছে। যদিও হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা মাত্র ১০টি। রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎস্যকরা। চিকিৎস্যকরা বলছেন, পানি ব্যবহারে সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

সিভিল সার্জন অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত বরগুনা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৭৭৯ জন, আমতলী-তালতলীতে ৩৩৭ জন, পাথরঘাটা উপজেলায় ২১১ জন, বেতাগী উপজেলায় ৯৭ জন, বামনায় ৯০ জন ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪৬ জনসহ মোট ১ হাজার ৫৭০ জন। গত এক সপ্তাহের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিগত দিনের সব রেকর্ড ভেঙেছে।

শনিবার (৯ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সরেজমিন দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ড রোগীতে পূর্ণ। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে বহিঃবিভাগ হয়ে আবার ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনের মেঝেতেও চিকিৎস্যা নিচ্ছে রোগীরা। যাদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যা বেশি। 

সদরের ঢলুয়া এলাকার ৭ বছরের শিশু রোজীকে সকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মা আয়শা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শুক্রবার (৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত থেকে রোজী ১৮-২০ বার বমি করেছে। সকালে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ছেলে চোখ খুলে তাকাতে পারছে না। স্যালাইন খাওয়ানোর পরেও দুর্বলতা কাটেনি। কীভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে, সেই ব্যাপারে কিছু জানি না।’

চিকিৎসা নিতে এসে হাসপাতালের বেড না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎস্যা নিচ্ছেন সদরের ফায়ার সার্ভিস অফিস এলাকার গৃহবধূ আকলিমা বেগম। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গোসলের জন্য খাকদোন নদীর পানি ব্যবহার করি। গভীর নলকূপের পানি খাই। তারপরও আক্রান্ত হয়েছি। বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।’  

আক্রান্ত রোগী ফারুক হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীদের অসতর্কতার কারণে রোগীদের সুস্থ হতে সময় লাগছে। টয়লেটের অবস্থা খারাপ। রোগীদের সেবা করতে যে সকল স্বজনরা হাসপাতালে থাকছেন, তারাও ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।’ 

বরগুনা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাসকিয়া সিদ্দিকা রাইজিংবিডিকে বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিগত ৫ বছরের মধ্যে সব রেকর্ড ভেঙেছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চিকিৎস্যক ও নার্স সংকট থাকার পরও সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছেন। মানুষকে সচেতন হতে হবে। চৈত্র মাসে পানি নষ্ট হয়ে ডায়রিয়া ছড়াচ্ছে। পানি নষ্টও করছে সাধারণ মানুষ। ময়লা-আবর্জনা-বর্জ্য খালে ও নদীতে ফেলানোর কারণে এমন অবস্থা। 

আবাসিক মেডিকেল অফিসার বলেন, প্রচুর বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত পানি থেকে ডায়রিয়া ধ্বংস হবে না। সেই সময় পর্যন্ত সবাইকে অবশ্যই থালা-বাসন ধোঁয়া ও গোসলের জন্যও সুপেয় পানির ব্যবহার করতে হবে। পরিষ্কার থাকতে হবে। কিছু খাবার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। 

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. ফজলুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা সব থেকে বেশি। অনেকেই আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎস্যা নিচ্ছেন। তাই আক্রান্ত রোগীর সঠিক সংখ্যা বের করাও অসম্ভব। 

তিনি আরও বলেন, ডায়রিয়া গুরত্ব না দিলে কিডনি রোগীর জন্য বড় বিপদ হতে পারে। গর্ভবতী মায়েরাও বড় বিপদের বাহিরে নয়। তাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে অবশ্যই সঠিক চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসতে হবে। দরকার হলে স্বাস্থ্য সেবা দিতে সকল চিকিৎস্যক ও নার্সের ছুটি বাতিল করা হবে। কিন্তু কেউ ডায়রিয়া নিয়ে অবহেলা করবেন না।

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়