মায়ের লাশ আটকে ছেলেদের পুলিশে দিলেন চিকিৎসক
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম
মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগ এনে উত্তেজিত আচরণ করায় ক্ষেপেছেন খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা মৃতের লাশ আটকে রেখে উল্টো তার দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার (১০ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে লাশ ফেরত এবং দুই ছেলের মুক্তির দাবিতে একই দিন দুপুর ৩টার দিকে খুলনার নতুন রাস্তা মোড় অবরোধ করে এক ঘণ্টা বিক্ষোভ করছেন মারা যাওয়া নারীর স্বজন ও স্থানীয়রা। ফলে খুলনা-যশোর রোডে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
জানা গেছে, নগরীর দৌলতপুর পাবলা কারিকর পাড়ার মাওলানা আ. রাজ্জাকের স্ত্রী পিয়ারুন বেগম (৫৫) দীর্ঘদিন নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। শনিবার (৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের লোকজন তাকে রাতেই খুমেকে ভর্তি করেন। কিন্তু রাতে একাধিকবার কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ডাকা সত্বেও তারা কোনো সারা দেননি। রাত ৩টার দিকে কেয়ারুন বেগমের অবস্থা খারাপ হলে ওই চিকিৎসকের রুমে গিয়ে ডাকাডাকি করা হলেও তারা কোনো সাড়াশব্দ দেননি। এ অবস্থায় মারা যান পিয়ারুন বেগম।
এদিকে, মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগ এনে কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক কামরুল ইসলামের সঙ্গে উত্তেজিত আচরণ করেন ওই নারীর ছেলে মো. মোস্তাকিম বিল্লাহ। এ সময় উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় দুই ভাইকে আটক করে পুলিশে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
মৃতের স্বামী মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর বুকে ব্যাথা ও পায়খানা-প্রসাব না হওয়ায় শুক্রবার রাতে খুমেক হাসপাতালের তৃতীয় তলার ১১-১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন। শনিবার রাতে আমার স্ত্রীর অবস্থা গুরুতর হলে আমার ছেলে ডাক্তার ডাকতে যায়। কিন্তু কোন ডাক্তার আসেনি। এরপর রাতে ছটফট করতে করতে আমার স্ত্রী মারা যায়। মায়ের এমন মৃত্যুতে আমার ছেলে মো. মোস্তাকিম গিয়ে ডাক্তারের কাছে জানতে চান তারা কেন দেখতে আসলেন না। এ নিয়ে আমার ছেলের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয় চিকিৎসকের। আমি যখন জানতে পারি তখন গিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। এ সময় একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক আমার গায়েও আঘাত করেন। অপর দুই ছেলে মো. তরিকুল ইসলাম কাবির ও সাদ্দাম হোসেনকে পুলিশে দিয়ে দেন। তারা বর্তমানে সোনাডাঙ্গা থানায় আটক রয়েছেন। আর আমার স্ত্রীর লাশও হাসপাতালে আটকে রাখা হয়েছে।’
মৃত পিয়ারুন বেগমের ভাইপো মামুন বলেন, ‘আমরা স্বজনরা চাচির লাশের কাছে যেতে চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের ভেতরে যেতে দিচ্ছে না।’
এ বিষয়ে খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ‘লাশ আটকানোর তো কিছু নেই। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পুলিশ তাদের নিয়ে গেছে। আমরা কোন জিডি বা মামলা করিনি।’
সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মমতাজুল হক জানান, ‘রাতে পিয়ারুন বেগম নামে এক মহিলার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসক ও কতৃপক্ষ দুজনকে আটক রেখে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের থানায় নিয়ে আসে।’
এদিকে রোববার মায়ের লাশ ফেরত এবং দু’ ছেলের মুক্তির দাবিতে দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খুলনার নতুন রাস্তা মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন স্বজনরা। ফলে খুলনা-যশোর রোডে সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আটকদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলে মারা যাওয়া নারীর স্বজনরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।’
নূরুজ্জামান/ মাসুদ
আরো পড়ুন