ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে তীব্র পেট্রোল সংকট, অকটেনেও শঙ্কা

মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ৫ মে ২০২২  
ঠাকুরগাঁওয়ে তীব্র পেট্রোল সংকট, অকটেনেও শঙ্কা

ঠাকুরগাঁওয়ের ফিলিং স্টেশনগুলোতে তীব্র পেট্রোল সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জেলাজুড়ে ফিলিং স্টেশনগুলোয় পেট্রোল পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ এই সংকটে বিপাকে পড়েছেন যানবাহনের চালকরা।

ডিপো থেকে পেট্রোল সরবরাহ বন্ধ থাকায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষ ও খুচরা বিক্রেতারা। তবে কবে নাগাদ এই সমস্যার সমাধান মিলবে তা কেউ বলতে পারছেন না।

সংকটের শুরুতে বাধ্য হয়ে বিকল্প হিসেবে অকটেন ব্যবহার করছিলেন আরোহীরা। তবে বৃহস্পতিবার (৫ মে) থেকে কিছু ফিলিং স্টেশনে অকটেন শেষ হয়ে গেছে জানিয়ে স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে অকটেনের সংকটও শুরু হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন ঠাকুগাঁওবাসী। 

মোটরসাইকেল চালক সোহান বলেন, ‘ঈদের তিন দিন আগ থেকে পেট্রোল পাচ্ছি না। কী কারণে পেট্রোল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে তা সঠিক উত্তর দিতে পারে না ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ। এতে চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।’ 

পেট্রোল সংকটের বিষয়ে কাদের ফিংলি স্টেশনে ম্যানেজার রুহুল আমিন বলেন, ডিপো থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে কী কারণে বন্ধ সেটা আমাদের আগে থেকে জানানো হয়নি। এদিকে পেট্রোল না দিতে পারায় গ্রাহকরা ফিরে যাচ্ছেন। এই সমস্যা ঠাকুরগাঁওয়ের সব ফিলিং স্টেশনই। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।’

কয়েকটি বড় গ্যালন নিয়ে চৌধুরী ফিলিং স্টেশনে এসেছেন প্রাইভেটকার চালক সৌরভ। গ্যালন নিয়ে আসার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমার গাড়ি পেট্রোলে চলে। পেট্রোল না থাকায় এতদিন অকটেন ব্যবহার করছিলাম। এখন অকটেনও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গাড়ির ট্যাংক ফুল করে গ্যালনেও স্টক করে নিচ্ছি। তেল না পেলে গাড়ি চালাব কী করে?’

জ্বালানি তেল সংকটে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাঁধক-কাঁকন ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার রশিদুলাম ইসলাম জানান, ঈদে আগেই তাদের পেট্রোল শেষ হয়ে গেছে। এতে অকটেনের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। অকটেনও শেষ হয়ে গেছে। এদিকে সরবরাহও নাই। সে কারণে পাম্প বন্ধ করে বসে আছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের গাড়িতে দুই পার্ট করা। এক গাড়িতেই একদিকে অকটেন ও অপরদিকে পেট্রোল নিয়ে আসি। তবে ডিপো থেকে এখন পেট্রোল দিচ্ছে না। গাড়িতে শুধু অকটেন আনতে গেলে খরচ বেশি পড়ছে। তাই অকটেন সরবরাহ বন্ধ রেখেছি। ডিপোতে অকটেনের কোনো সংকট নেই।’ 

মেসার্স সুরমা ফিলিং স্টেশনের মালিক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘পেট্রোল সরবরাহ না থাকায় এবার ঈদে ব্যবসার চরম ক্ষতি হয়েছে। ডিপো থেকে সরবরাহ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছি। আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে।’

ঠাকুরগাঁও পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনামুল হক জানান, জেলায় ফিলিং স্টেশনের সংখ্যা ৩৬টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৪টি, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় দুটি, হরিপুর উপজেলায় দুটি, রাণীশংকৈল উপজেলায় চারটি ও পীরগঞ্জ উপজেলায় চারটি ফিলিং স্টেশন রয়েছে।

এনামুল বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও জেলায় দৈনিক পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার লিটার। এরমধ্যে পেট্রোল ২৩ হাজার লিটার, অকটেন সাড়ে ১৬ হাজার লিটার ও ডিজেলের চাহিদা ৫০ হাজার লিটার। এখন জেলায় প্রায় ১৪ হাজার লিটার পেট্রোল সরবরাহ কম হচ্ছে। ফলে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।’

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘জেলায় জ্বালানি তেলের সংকট হয়েছে বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি অবগত হলাম। তেল সংকটের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে জ্বালানি তেলের সংকট তৈরি করে থাকে তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঠাকুরগাঁও/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়