ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ছুটিতে ঘুরে আসুন কুমিল্লা

মোহাম্মদ শরীফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৭ মে ২০২২  
ছুটিতে ঘুরে আসুন কুমিল্লা

কুমিল্লায় রয়েছে দেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শালবন বিহার

ভ্রমণপিপাসুদের কাছে ঈদ, পূজাপার্বণ কিংবা ছুটির দিন ঘুরতে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত সময়। যান্ত্রিক জীবন থেকে তাই মুক্তি পেয়ে দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ছড়িয়ে পড়েন পর্যটকরা। এমনই একটি পর্যটন স্পট হলো কুমিল্লা।

পুরাকীর্তি ও ঐতিহাসিক স্থাপনার জন্য আলোচিত এই জেলা। জেলাটির বিভিন্ন স্থানে এমন কিছু নিদর্শন আছে যেগুলো দেখতে ভিড় জমান দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় পর্যটন স্পটগুলোতে বাড়ছে ভিড়। আজ জানাবো কুমিল্লার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘুরে আসার গল্প।

কুমিল্লায় ঘুরে বেড়ানোর স্থানগুলোর মধ্যে গোমতীর পাড়, শালবন বিহার, নতুন বৌদ্ধ বিহার, শালবন, কুমিল্লা জাদুঘর, লালমাই পাহাড়, ওয়ার সিমেট্রি, বার্ড, রুপবান মূড়া, ধর্ম সাগর পাড়, রুপসাগর, রাণী ময়নামতি বিহার, ধর্ম সাগর পাড়ের রাণীর কুটির, কাজী নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত ভিক্টোরিয়া কলেজ ক্যাম্পাসের রাণীর দিঘী, টাউনহল, বিবির বাজার স্থল বন্দর, নবাব ফয়জুন্নেছা প্রাসাদ, ম্যাজিক প্যারাডাইস উল্লেখযোগ্য।
কোথায় কি আছে-

শালবন বিহার: কুমিল্লায় ঘুরে বেড়ানোর শুরুটা যদি আপনার কোর্টবাড়ি এলাকা থেকে শুরু হয়, সেটি হবে নানন্দিক। কারণ এখানে রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। দেশের সবচেয়ে পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন চোখে পড়বে কোর্টবাড়ি এলাকায়। সাত থেকে আটশো শতাব্দির শালবন বিহার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি দেশের সবচেয়ে প্রাচীণ নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। নানা রকম ফুলে এই বিহারটিকে এখন সাজানো হয়েছে। ১১৫টি সন্ন্যাস কক্ষ, ১০টি মন্দির ও ১২টি স্তুপ নিয়ে এই বিহার। আগে এই বিহারটি 'ভবদেব মহাবিহার' নামে পরিচিত ছিল। 

বর্তমানে পুরো সপ্তাহ জুড়ে বিহারটি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। ২০ টাকা মূল্যের টিকিট কেটে এখানে প্রবেশ করতে হয়।

কুমিল্লা জাদুঘর: শালবান বিহারের পাশেই রয়েছে জাদুঘর। সেখানে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা সময়ে উদ্ধার হওয়ার প্রাচীন দাতব্য জিনিস ও মূল্যবান মূর্তিসহ আদিকালে ব্যবহার করা বিভিন্ন আসবাবপত্র চোখে পড়বে। 

লালমাই পাহাড়: এখান থেকে দেখা মিলবে লাল মাটির পাহাড় হিসেবে পরিচিত লালমাই পাহাড়ের। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় রোড ধরে যতই সামনে আগ্রসর হবেন ততোই পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য চোখকে তৃপ্তি দেবে।এছাড়া এই পাহারের একাংশে রয়েছে শাল গাছের বন।

কুমিল্লা বার্ড: কোর্টবাড়ি থেকে উত্তরে বিজিবি ক্যাম্প রোডে আছে আখতার হামিদ খান প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী বা বার্ড। ছায়া সুনিবিড় শান্তিতে ঘেরা রাস্তার দুপাশ দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাবে। বাহারি ফুলের মৌ মৌ গন্ধে অন্যপ্রকার অনুভূতি সৃষ্টি হবে। ফুল ছাড়াও এখানে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছপালা। 

নীলাচল পাহাড়: বার্ডের পশ্চিম পাশের রাস্তা ধরে একটু পথ হেটে গেলেই দেখা মিলবে নীলাচল পাহাড়ের। এটি বার্ডের সর্ব পশ্চিমে অবস্থিত।

ইটাখোলা মুড়া ও রুপবান মুড়া: বার্ড থেকে বেড়িয়ে কিছুটা পশ্চিমে গেলে চোখে পড়বে ইটাখোলা মুড়া ও রুপবান মুড়া৷ এই দুটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শালবন বিহারের সমসাময়িক। এখানে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড় জমে।

ধর্ম সাগর: কোর্টবাড়ি পর্ব শেষ করে আপনি চলে যেতে পারেন কুমিল্লা নগরীর প্রাণ কেন্দ্র কান্দিরপাড়ে। সুবিশাল টাউন হল মাঠে গরুর দুধের চা কিংবা রং চা আপনাকে সতেজ করে তুলবে সহজে। এখানে রয়েছে কুমিল্লা ক্লাব। টাউন হলের উত্তরে অবস্থান ধর্ম সাগর পাড়। দিন ভর মুখরিত থাকে জায়গাটি। প্রিয়সীর হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে রাজা ধর্ম মানিক্যের গড়া ধর্ম সাগরটি আপনাকে পুলকিত করবে। ইচ্ছে হলেই এখানে নৌকা ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন।

গোমতীর পাড়: তবে কুমিল্লা আসলে কখনোই গোমতীর পাড় ঘুরতে ভুলবেন না। আদালত পাড়া হয়ে সামনে গেলে চোখে পড়বে গোমতীর পাড়। নদীর দক্ষিণ পাড় ঘেঁষে যতই পূর্ব দিকে যাবেন মুগ্ধতা আপনাকে ততই ঘিরে ধরবে। বিকেলের গোমতীর পাড় এক কথায় নান্দনিক। গোমতীর পাড় ঘেঁষে কিছু ভ্রাম্যমাণ রেস্টুরেন্ট তৈরী হয়েছে। গোমতীর পানিতে পা ভিঁজিয়ে চা কিংবা বিকেলের নাস্তা করার দারুণ কিছু সুযোগ করে দিয়েছে তারা। 
এছাড়া গোমতীর এই পাড় ধরে ৩-৪ কিলোমিটার পূর্ব দিকে গেলেই ভারতীয় সীমান্ত। সেখানে রয়েছে কুমিল্লার এক মাত্র স্থল বন্দর বিবির বাজার স্থল বন্দর।
কুমিল্লা ক্যান্টমেন্ট এলাকায় রয়েছে রুপসাগর। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের বাদশা মিয়া বাজার এলাকায় প্রাচীণ নিদর্শন রাণী ময়নামতি বিহার। 

ওয়ার সিমেট্রি: ময়নামতি বিহারের পথেই পড়বে ওয়ার সিমেট্রি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত তৎকালীন ভারতীয় ও ব্রিটিশ সেনাদের সমাধি এটি। সমাধিটি নির্মিত হয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন। এই সমাধিক্ষেত্রে ৭৩৬টি সমাধি রয়েছে। সমাধিক্ষেত্রের প্রবেশমুখে একটি তোরণ ঘর রয়েছে, যাতে সমাধিক্ষেত্রের ইতিহাস ও বিবরণ লেখা আছে। ভেতরে প্রশস্ত পথ রয়েছে, যার দুই পাশে ফলকযুক্ত সমাধি।

রসমলাই ও খাদি কাপড়: কুমিল্লার নামটি মুখে আসলে প্রথমে মনে পড়ে রসমলাইয়ের নাম। মুখরোচক বিজ্ঞাপন ও চতুরতার ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই আসল রসমলাইয়ের স্বাদ হারান। কুমিল্লার অরিজনাল রসমলাই কেবল একটি দোকানেই মিলে। অরিজিনাল স্বাদ পেতে হলে আপনাকে কিছুটা কষ্ট সহ্য করতে হবে।

নগরীর মনোহরপুরে পাবেন অরিজিনাল রসমলাইয়ের সন্ধান। তবে সেখানে অধিকাংশ সময় সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে রসমলাই সংগ্রহ করতে হয়।

কুমিল্লার আরো একটি ঐতিহ্য খাদি কাপড়। কথিত আছে অসহযোগ আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধি কুমিল্লার খাদি কাপড় পড়তেন। তিনি কুমিল্লা এসে খাদির বিকাশ ও এর ব্যবহারের বিষয়ে সবাইকে উৎসাহী করে তোলেন। 

কুমিল্লা নগরীতে খাদি ঘর ও পূর্বাশা নামে প্রাচীন খাদি কাপড় বিক্রির দোকান আছে।

আমোদ পত্রিকা: কুমিল্লা অন্য একটি ঐতিহ্য হচ্ছে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকা। ১৯৮৫ সালে পত্রিকাটি এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন আঞ্চলিক পত্রিকার মর্যাদা পায়। ১৯৫৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পত্রিকাটি নিয়মিত বের হচ্ছে। ফজলে রাব্বীর হাত ধরে প্রকাশ হওয়া এই পত্রিকাটির বর্তমান সম্পাদক বাকিন রাব্বী। সাম্প্রতি পত্রিকাটি ৬৮ বছরে পদার্পণ করেছে।

যেভাবে কুমিল্লায় যাবেন: ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম থেকে মহাসড়ক ধরে সহজেই কুমিল্লায় আসা যায়। চট্টগ্রাম থেকে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড বাসস্ট্যান্ড থেকে কুমিল্লায় আসা যায়। এছাড়া রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বাসযোগে কুমিল্লার শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ডে নামবেন। সেখানে থেকে খুব সহজেই ইচ্ছেমতো ঘুরে আসতে পারবেন কুমিল্লার দর্শনীয় স্পটগুলো।

থাকা খাওয়া: থাকার জন্য কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে বেশ কিছু মাঝারি ধরনের হোটেল রয়েছে। এছাড়া টাউন হলের পাশে কুমিল্লা ক্লাব, টমটম ব্রিজ এলাকার ওয়াসিস হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, বার্ডেও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। 

পুলিশ লাইনের কুটুমবাড়ির কাচ্ছি, ছন্দু হোটেলের আলুর ভর্তা ও গরম গরুর মাংসের স্বাদ নিতে অবশ্যই মিস করবেন না।

কুমিল্লা/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়