বৃষ্টি হলেই ধসে পড়ছে টিলা, ঝুঁকিতে ১৯ পরিবার
মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম
বৃষ্টি হলেই হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট সাতছড়িতে ধসে পড়ছে টিলা। এ কারণে ত্রিপুরা পল্লীতে বাড়ছে ঝুঁকি। পল্লী রক্ষায় এখনো বরাদ্দ হয়নি। দিন দিন আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে টিলায় বসবাস। স্থানীয় পরিবারগুলো বলছে, জরুরি ভিত্তিতে পল্লী রক্ষায় বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। নাহয় যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এদিকে, ত্রিপুরা পল্লীর হেডম্যান চিত্তরঞ্জন দেববর্মা জানান, ইতোমধ্যে এ টিলা থেকে ২৪টির মধ্যে পাঁচটি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এভাবে ধসে পড়তে থাকলে সবাইকেই একসময় অন্যত্র চলে যেতে হবে।
সরেজমিন গেলে দেখা গেছে, ছড়ার পাশে থাকা টিলার অনেকাংশ ধসে পড়েছে। এরমধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে বাকি ১৯টি পরিবারকে বসবাস করতে হচ্ছে। যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসা আপন ঠিকানার এমন অবস্থায় পল্লীবাসীর মন ভালো নেই। চাপা কষ্ট কাজ করছে তাদের ভেতর।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, ‘ত্রিপুরা পল্লী রক্ষায় টিলা মেরামতে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ আসামাত্র দ্রুত টিলা মেরামত করা হবে। এ ছাড়া, উপজেলা প্রশাসন থেকে পল্লীর বাসিন্দাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হয়ে থাকে।’
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ত্রিপুরা পল্লীর হেডম্যান চিত্তরঞ্জন দেববর্মা বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন খোঁজ-খবর নেয়। আমরা প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছি। পাহাড়ে আমাদের জন্ম। মৃত্যুও যেন এখানেই হয়। এ স্থানটা আমাদের কাছে প্রিয়। পাহাড় রক্ষা করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাই। আমরা টিলা কাটি না। টিলা রক্ষায় কাজ করি। তবে টিলা কাটা চক্রের কাছে আমরা অসহায়। ’
তিনি আরও বলেন, ‘জন্মের পর ছড়াগুলো দেখলাম ছোট, এখন দিন দিন বড় হচ্ছে। বাকি দিনে কী হবে, জানি না। আমাদের বসবাস পাহাড়ের টিলার ওপরে। টিলায় বসবাস নিরাপদ মনে করি। আর সবাই মিলেমিশে একত্রে থাকি। আমাদের পূর্ব পুরুষরাও নির্জন পাহাড়-টিলায় বাস করে গেছেন।’
চিত্তরঞ্জন দেববর্মা বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর সরকারি সিদ্ধান্তে বনবিভাগ আমাদের বনের এক পাশে অবস্থিত সড়ক পথের কাছের টিলায় বসবাসের ঠিকানা করে দেয়। সেই থেকে এখানে বসবাস করছি। কিন্তু এই টিলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়া থেকে বিভিন্ন চক্র নানা সময়ে বালু উত্তোলন করছে। তাই আজ টিলা ধসের কারণ হয়ে উঠেছে। একদিকে ছড়া হচ্ছে প্রশস্ত। অন্যদিকে পাহাড়ি টিলা হচ্ছে সংকীর্ণ। তার সাথে আমাদের বসবাসও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে।’
পল্লীর সহকারী হেডম্যান আশিষ দেববর্মা জানান, বৃষ্টিপাতের কারণে ২০১৭ সালে পল্লীর টিলা ধস শুরু হয়। পল্লীর ২৪টি পরিবারের মধ্যে সেই মৌসুমে ৩ পরিবারকে নিজেদের ভিটা ছাড়তে হয়েছে। তারা টিলার অন্যত্র গিয়ে থাকছে। পরে আরো দুটি পরিবারকে নিজেদের ভিটা ছাড়তে হয়েছে। বর্তমানে পুরো টিলাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। উদ্যানের অন্যান্য ছড়ায়ও টিলা ধসে পড়ছে। সেইসঙ্গে ভেঙে পড়ছে গাছপালা। টিলা রক্ষায় প্রাচীর নির্মাণ করা দরকার। আর তাতে বড় আকারের বাজেট প্রয়োজন।
সাতছড়ি বন্যপ্রাণী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এ উদ্যানটি বেশ প্রিয়। এখানে যাতায়াত সহজ। রয়েছে বন্যপ্রাণীর বিচরণ। বৃষ্টিতে এ পাহাড়ের ত্রিপুরা পল্লীসহ বিভিন্ন টিলা ধসে পড়ছে। দ্রুত মেরামত প্রয়োজন।’
/এইচএম/
আরো পড়ুন