ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জয়পুরহাটে ধান ঘরে তুলতে কৃষকের দ্বিগুণ খরচ

জয়পুরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৪, ১৭ মে ২০২২   আপডেট: ১৭:৪৭, ১৭ মে ২০২২
জয়পুরহাটে ধান ঘরে তুলতে কৃষকের দ্বিগুণ খরচ

জয়পুরহাটে ধান কাটা এবং মাড়াই করতে কৃষককে দ্বিগুণ ব্যয় করতে হচ্ছে। তারপরও চাহিদা অনুযায়ী কৃষিশ্রমিক মিলছে না। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা ও মাড়াইয়ে খরচ পড়ছে সাড়ে চার থেকে ছয় হাজার টাকা। এদিকে ঝড়-বৃষ্টির কারণে ধানগাছ হেলে পড়া এবং নিচু জমিতে পানি জমায় কৃষকের মনে তৈরি হয়েছে নতুন দুশ্চিন্তা। ফলে বাধ্য হয়ে জেলার কৃষক দ্বিগুণ মজুরি দিয়ে জমির ধান কেটে ঘরে তুলছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার চলতি মৌসুমে ৬৯ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। কিন্তু কালবৈশাখী ঝড়-বৃষ্টির প্রভাবে জেলায় প্রায় ১৫ হাজার ৯৬২ হেক্টর বোরো ধান ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে এবং ২ হাজার ১৩ হেক্টর বোরো ধান ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ৮৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা।  

জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ফিসকাঘাট, ধরঞ্জি হাজীপাড়া, ইটাখোলা বাজার, কালাই উপজেলার মোলামগাড়ীহাট, আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালি ও সদর উপজেলার আদর্শপাড়ার একাধিক ধানচাষীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি কালবৈশাখীর কারণে জমির পাকা এবং আধাপাকা ধান গাছ হেলে পড়েছে। অনেক জায়গায় নিচু জমিতে পানি জমেছে। তাই দ্রুত ধান কেটে ফেলতে হচ্ছে। এ কারণে দিতে হচ্ছে চড়া মূল্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতি বিঘা ধান ২ হাজার ৫০০ টাকায় তারা কাটতে পারতেন বলে জানিয়েছেন। এখন সেই ধান কাটতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। 

কালাই উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের কৃষক শফির উদ্দিন, অজিমুদ্দিন, ফিতা মিয়া ও আনিছুর রহমান জানান, জমি বর্গা নিয়ে তারা আড়াই বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে  ১৬ হাজার টাকা। এ অবস্থায় চাষাবাদের খরচ আর ধান বিক্রি করে আয় প্রায় সমান। তারা আরো জানান, সবচেয়ে বিপদে আছেন মধ্যবিত্ত কৃষক। তারা অল্প জমি বর্গা দিতে পারেন না, আবার দিনমজুর ছাড়া নিজেরাও চাষ করতে পারেন না। 

আক্কেলপুর উপজেলার কোলা গ্রামের কয়েকজন চাষী জানান, শ্রমিকের মজুরি যোগ করলে তাদের আয়-ব্যয় সমান হবে। তাহলে এতো পরিশ্রমের মূল্য কোথায়? এমন প্রশ্ন তাদের। 

এ কারণে জেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে কৃষকের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য নেই। পাঁচবিবি উপজেলার শাইলট্টি গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন, চানপাড়া গ্রামের হাকিম হোসেনসহ অনেকে জানান, সরকার এবার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে মণ প্রতি ১০০০ টাকা দরে ধান না কিনলে ও বাজারে ধানের দাম না বাড়লে অধিকাংশ কৃষক লোকসানের মুখে পড়বেন।

এদিকে কৃষিশ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্থানীয় শ্রমিকরা জানান, জমির ধান শুয়ে পড়ায় এবং জমিতে পানি জমে থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে ধান কাটা যাচ্ছে না। স্বাভাবিক সময়ে এ কাজে যেটুকু সময় লাগে এখন তারচেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে। ফলে তাদের আগের মজুরিতে কাজ করলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। 

জয়পুরহাট জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার পর্যন্ত ৫০ শতাংশ জমির  ধান কাটা-মাড়াই হয়েছে। তবে কালবৈশাখীর কারণে জেলার বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রমিকের উচ্চ মজুরি। 

শামীম/তারা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়