ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সিলেটে পচা আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে গন্ধ, পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা

সিলেট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৯, ২৩ মে ২০২২   আপডেট: ১৩:৫৩, ২৩ মে ২০২২
সিলেটে পচা আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে গন্ধ, পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা

সিলেটে নগরীর অনেক এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় সড়কের ওপর জমা হয়েছে ময়লা আবর্জনা

সিলেটে বন্যার পানি যত নেমে যাচ্ছে, ততই ভেসে উঠতে শুরু করেছে এর ক্ষত চিহ্ন। শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গলে-পচে যাওয়া ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে উৎকট গন্ধ। চলাচলের সময় তাই মানুষ নাক ঢেকে এসব স্থান পার হতে হচ্ছে। এছাড়া নগরে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। একই সঙ্গে পানি বাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সোমাবার (২৩ মে) দুপুর পর্যন্ত সিলেটের প্লাবিত এলাকার ৭০ শতাংশ পানি নেমে গেছে। 

ভুক্তভোগী বানভাসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরীতে বন্যার পানি কমলেও অনেক স্থানে আবদ্ধ হয়ে থাকা পানি নামছে না। ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত এসব পানি কালো রঙ ধারণ করেছে। যেসব স্থান থেকে পানি সরে গেছে সেসব স্থানে পচা-গলা ময়লা আবর্জনা পড়ে আছে। সড়কে দেখা দিয়েছে বড় বড় গর্ত।

নগরীর তেলিহাওর এলাকার পানি নেমে গেছে। সিলেট ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের সামনে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। আশপাশে সৃষ্ট হয়েছে জলাবদ্ধতা। এসব পানিতে ময়লা আবর্জনা ভাসছে। পানি বাতাসের সঙ্গে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। 

তালতলা পয়েন্টের একটি অংশে এখনো পানি রয়েছে। কালো ছাঁই রঙয়ের দুর্গন্ধযুক্ত এ পানি দ্রুতগামী রিকশার কারণে অনেক সময় মানুষের গায়ে ছিটকে গিয়ে লাগছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে কাপড়। অনেক সময় রিকশা চালক ও পথচারীদের মধ্যে বাকবিতাণ্ডর ঘটনাও ঘটছে।

এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, বন্যার সময় নিরাপদ পানির উৎস সমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে, নিরাপদ এবং পানযোগ্য পানির মারাত্মক সঙ্কট দেখা যায়। বন্যার পানির সঙ্গে পানিবাহিত রোগেরও তখন আগমন ঘটে। ফলে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, চর্মরোগ, চোখের অসুখসহ বিভিন্ন রোগ ছড়াতে শুরু করে। এছাড়া, বৃষ্টি এবং বন্যার পানির কারণে মশার বংশবৃদ্ধির হার বেড়ে যায় এবং মশাবাহিত রোগসমূহ যেমন- ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বন্যা পরিবর্তী সময়ে নগীরর বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বিশুদ্ধ পানি নিয়ে। সিটি করপোরেশনের পানির লাইন পাম্প বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় এখনো নগরীতে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।

নগরীর কলাপাড়ার বাসিন্দা সালেহ আহমদ বলেন, ‘বাসার মটোর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনো তা পানির নিচেই রয়েছে। ফলে রান্না ও খাবার নিয়ে ভোগান্তির মধ্যে রয়েছি। সিটি করপোরেশন থেকে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছেনা। অনেকে বাজার থেকে পানি কিনে জরুরী কাজ সারছেন।’

বানিজ্যিক এলাকা কালিঘাটের বাসিন্দা আব্দুল আলী বলেন, ‘বন্যার পানি যাওয়ার কোনো রাস্তা না থাকায় বিভিন্ন স্থানে পানি আটকে আছে। পানিতে ভেসে আসা কলোনী এবং বস্তি এলাকার ময়লা জলাবদ্ধতার মধ্যে আটকে থাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।’

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহারিয়ার বলেন, বন্যার পর ডায়রিয়া এবং চর্মরোগে মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। তবে পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এ জন্য আমরা এরইমধ্যে ১৪০ টি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছি। এসব টিম নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার্তদের সেবায় কাজ করছে।’

পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে চলতি মাসের ১১ মে থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ধীরে ধীরে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট মহানগরেরও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এক এক করে মহানগরীর প্রায় ২০ টি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় অনেক মানুষই বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান নেন। পাঁচ দিন পানিবন্দী থাকার পর গত শনিবার রাত থেকে এসব এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের উপ সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, ‘সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি অনেক উন্নতির দিকে। দু-এক দিনের মধ্যে বেশিরভাগ এলাকা থেকেই পানি নেমে যাবে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার সকাল ৯ টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে অপরিবর্তিত ছিল।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এখনো অনেক এলাকা থেকে পানি নেমে যায়নি। অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে বাসায় ফিরেছেন। তাদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিতকরণের কাজ চলছে। খুব তাড়াতাড়ি বিশেষ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করা হবে।’

নূর আহমদ/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়