অর্থকরী ফসলের তালিকায় নাম নেই, অথচ শত কোটির ব্যবসা
ফারুক আলম, লালমনিরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ছোট-বড়, শতবর্ষী কয়েক হাজার সুপারি বাগান রয়েছে লালমনিরহাট জেলায়। মানুষের বিয়ে, আত্মীয়-স্বজন আপ্যায়ন, সামাজিকতায় পান-সুপারির প্রচলন ও কদর এই জেলায় সবার উপরে। নববধূর বাড়ি থেকে পান-সুপারি না এলে ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এতো ঘটনা যাকে নিয়ে সেই সুপারির চাহিদা প্রচুর থাকলেও নেই সমাদর। অর্থকরী ফসলের তকমা জোটেনি সুপারির ভাগ্যে। অথচ নীরবে জেলার সুপারি চাষীদের অর্থের জোগান দিয়ে যাচ্ছে পানের অন্যতম এই অনুষঙ্গ।
জেলায় এমন একটি বাড়ি পাওয়া যাবে না, যেখানে সুপারি গাছ নেই! বাগানও রয়েছে প্রচুর। অনেক বাগানে সুপারির সঙ্গে করা হচ্ছে লটকন চাষ। এতে লাভ প্রায় চারগুণ। জেলার সুপারি যাচ্ছে গাইবান্ধা, বগুড়া, ঢাকা, কুমিল্লাসহ কয়েকটি বড় শহরে। এখানকার সুপারির আকার বড় ও দামে সস্তা। যে কারণে চাহিদাও বেড়েছে।
বায়েজিদ, বেলাল, তারিকুল তরুণ সুপারি চাষি। প্রত্যেকেরই সুপারির বাগান আছে। তারিকুল বলেন, এবার ২০টি সুপারির গাছ থেকে ৩০ হাজার টাকার সুপারি বিক্রি করেছি। গাছে আরো সুপারি আছে।
জেলার দুড়াকুটি, শিয়ালখোওয়া, কাকিনা, চাপারহাট, চামটাহাট, ভুল্ল্যারহাট, ভোটমারি, বড়বাড়ি হাটে সুপারি বিক্রি হয়। জেলার এগুলো বড় হাট। চাপারহাটের ইজারাদার খোকন মিয়া, বুড়িরহাটের ইজারাদার পিন্টু বসুনিয়ার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা প্রতি মৌসুমে ২০টি হাট পান। হাটে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পোন হিসাবে সুপারি বিক্রি হয়। ৮০টি সুপারিতে এক পোন। সর্বোচ্চ সুপারি ওঠে চাপারহাট, চামটা, শিয়াল খোয়া, কাকিনায়। জেলার প্রতি হাটে ৩ হাজার পোন পর্যন্ত সুপারি ওঠে। মৌসুম শেষে প্রায় ৫০ কোটির বেশি সুপারি কেনা-বেচা হয় বলে জানান তারা।
স্থানীয় সুপারি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় জেলায় মোট উৎপাদিত সুপারি বিক্রি হয় শত কোটি টাকার বেশি। অনেকে মৌসুমে সুপারি বিক্রি করেন না। তারা মাটির নিচে পলিথিন বা বস্তাবন্দি করে জাগ দিয়ে রাখেন। সেই সুপারি অন্য সময় বিক্রি করেন। তাতে ভালো দাম পাওয়া যায়।
স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলার পাঁচ উপজেলায় ৫১২ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি প্রায় ২৭ টন সুপারির ফলন হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা, স্থানীয় চাহিদা, অন্য জেলা থেকে আমদানি, জেলা থেকে রপ্তানির হিসাব একত্রে একশো কোটি টাকার বেশি লেনদেন হবে।
তবে সুপারি চাষ নিয়ে কৃষকের মধ্যে অসচেতনতা রয়েছে উল্লেখ করে কৃষিবিদ সুশান্ত রায় বলেন, আমাদের অঞ্চলে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব সঠিক পরিমাপ করে লাগানো হয় না। সার বা গাছের খাদ্য দেওয়া হয় না। সার ব্যবস্থাপনাসহ গাছ সঠিক দূরত্বে রোপণ করলে অন্যান্য জেলার চেয়ে আমাদের উৎপাদন ভালো হবে।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, সুপারি নিয়ে আমরা তেমন কাজ করি না। এখন সার, বাগান ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছি। চুই, গাছ-পান, লটকনের মতো ফসলগুলো সাথি ফসল হিসাবে চাষের পরামর্শ দিচ্ছি। চুই দারুণ একটি অর্থকরী ফসল। এটা খুব সহজেই সুপারির সঙ্গে চাষ করা যায়। এতে কৃষক প্রচুর লাভবান হবে।
/তারা/
আরো পড়ুন