ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দাওয়াত না পেয়ে শিক্ষক পেটালেন চেয়ারম্যান!

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১২, ২৮ মে ২০২২   আপডেট: ২১:১৬, ২৮ মে ২০২২
দাওয়াত না পেয়ে শিক্ষক পেটালেন চেয়ারম্যান!

ছবি: সংগৃহীত

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আন্তঃবার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়ে নিজস্ব লোকজন দুই শিক্ষককে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার খান মিঠুর বিরুদ্ধে। পরে তার নিজস্ব লোকজন অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুর করে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় বলেও অভিযোগ। 

শনিবার (২৮ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের চন্ডিপুর খেলার মাঠে এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনার বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী দুই শিক্ষক।

লিখিত অভিযোগ ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খানমরিচ ইউনিয়নের ২৮টি বিদ্যালয়কে দু’টি ভাগে ভাগ করে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে শনিবার ইউনিয়নের চন্ডিপুর খেলার মাঠে ১৪টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশে বাইরের অতিথিদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে বিদ্যালয়ের প্রবীণ প্রধান শিক্ষকরা সকাল ৯টায় এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

এদিকে, এদিন সকাল সোয়া ১০টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার খান মিঠু এই অনুষ্ঠানে এসে দাওয়াত না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সে সময় শিক্ষকরা তাকে বসতে বললেও তিনি চলে যান। কিছুক্ষণ পর শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে প্রধান শিক্ষকরা খেলার মাঠের পাশে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মনোয়ার খানের নির্দেশে তৌকির, মাসুদ ও আবুল কালামসহ কয়েকজন যুবক বাঁশের লাঠি দিয়ে দাসমরিচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে (৫৭) বেধড়ক পেটায়। এসময় অন্য শিক্ষকরা দৌড়ে নিজেদের রক্ষা করেন। 

পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তৌকির, মাসুদ ও আবুল কালামসহ প্রায় ১৫ জন যুবক লাঠিসোটা নিয়ে মাঠে থাকা শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে মঞ্চ ভাঙচুর করে। এই হামলায় চন্ডিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। এর পরপরই মাঠ থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা চলে গেলে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়।

সুলতানপুর বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাসিনুজ্জামান স্বপন বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলাপ করেই আয়োজন করা হয়েছে। প্রথমদিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ ব্যক্তিদের দাওয়াত করা হয়নি। চেয়ারম্যানকে আগামী ৩০ তারিখ প্রতিযোগিতার ফাইনালের দিনে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি শিক্ষকদের ওপর হামলা করে কাজটা ঠিক করেননি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি জানার পরেই থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন প্রশাসনকে জানানো হয়েছে এবং থানা প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে, এই হামলার ঘটনার বিচার চেয়ে ১৪টি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষে ভুক্তভোগী শিক্ষক হাবিবুর রহমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন, শিক্ষকদের এমন একটি লিখিত অভিযোগ শনিবার সন্ধ্যায় পেয়েছি। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর যেহেতু এটি ফৌজদারি অপরাধ, সে কারণে পুলিশ প্রশাসনও বিষয়টি দেখবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার খান মিঠু বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত করা হয়েছিল। আমি গিয়ে দেখি মঞ্চে শিক্ষকরা বসে আছেন। আমাকে এক কোণায় বসতে দেওয়া হয়। এভাবে সেখানে আমাকে অপমান করা হয়েছে। তারপরও আমি অনুষ্ঠান থেকে চলে এসে বিষয়টি ইউএনও, শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। কোনো হামলা, ভাঙচুর বা মারধরের ঘটনা ঘটেনি। বরং তারা আমাকে অপমান ও হেয় করার ঘটনা ধামাচাপা দিতে এই মিথ্যা ঘটনার সৃষ্টি করেছেন।

শাহীন রহমান/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়