ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কুতুবদিয়া ঘাট পারাপার, ফেরি চালুর আকুতি

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫২, ২ জুন ২০২২   আপডেট: ১৩:০০, ২ জুন ২০২২
মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কুতুবদিয়া ঘাট পারাপার, ফেরি চালুর আকুতি

ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই প্রতিদিন নদী পর হচ্ছেন হাজার হাজার দ্বীপবাসী

মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোটে করে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ থেকে চকরিয়া মগনামা ঘাট পারাপার করছেন। বিশেষ করে ৩ কিলোমিটারের এই নৌ পথটিতে মালামাল নিয়ে পারাপার হওয়া যেমন কষ্টের তেমনি বাড়ছে খরচও। এমনকি মুমূর্ষ রোগীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য নদী পার হতে গিয়ে মারাও যান। তাই এই ঘাটে ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

কুতুবদিয়া দ্বীপটিতে দেড় লাখ মানুষের বসতি। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তারা। বিপদসংকুল পরিস্থিতিতেও লক্কর ঝক্কর নৌকা, ট্রলারে করে নদী পার হতে হয় দ্বীপবাসীদের। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও এই নৌপথে ফেরি সার্ভিস চালু না হওয়ায় আক্ষেপ রয়েছে তাদের।  

এছাড়া ইজারাদারদের সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। মগনামা-কুতুবদিয়া ঘাট পারপারে টুলসহ নিয়ম মোতাবেক ২০ টাকা ট্রলার ভাড়ার মধ্যে ইজারাদাররা নেয় ৩০-৪০ টাকা। স্পিডবোটে করে ৭০ টাকার জায়গায় তারা নিচ্ছে ১০০ টাকা। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় দ্বীপবাসিদের। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্বল ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে খেসারত দিতে হচ্ছে তাদের। যুগের পর যুগ ধরে এই নৌপথে ফেরি চালুর দাবি জানানো হলেও তাদের কথার কোনো মূল্যায়ন হয়নি। 

দ্বীপের আলী আকবর ডেইলের  বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, 'বন্যা তাড়িতদের কপাল যেন আজীবন পোড়া। স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হয়ে গেল কিন্তু এখনো ফেরি চালু হয়নি। দ্বীপের নেতাদের কোনো যোগ্যতা নাই। ফেরি সার্ভিস চালুর বিষয়ে কোনো নেতাকে মাথা ঘামাতে দেখিনা আমরা।'

চারদিকে সমুদ্রে ঘেরা এ উপজেলার উৎপাদিত পণ্য দ্রুত পরিবহনের অভাবে প্রতিবছর আর্থিকসহ বিবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কৃষকরা। 
চট্টগ্রাম, চকরিয়া ও কক্সবাজার থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য বড়ঘোপ-মগনামা নৌ রুটের নদীতে ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষের।

কুতুবদিয়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি হুমায়ুন সিকদার বলেন, 'সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি দ্বীপবাসী। ফেরি সার্ভিস চালু অনেক দিনের দাবি এখানকার বাসিন্দাদের। কার কথা কে শোনে! ফেরি চালু হলে নিত্যপণ্য আনা-নেওয়ার চাহিদা পূরণ হবে। মানুষের খরচও কমবে। কিন্তু সিন্ডিকেটরা উন্নয়ন চায় না। তাদের এমন জঘন্য কার্যক্রমে কষ্ট পাচ্ছে কুতুবদিয়ার হাজার মানুষ। ঘাট ইজারাদারদের কালো ইশারায় ফেরি সার্ভিস চালু করা হচ্ছে না।’  

শিক্ষার্থী আহমেদ সাকিব বলেন, 'কক্সবাজার জেলায় কুতুবদিয়া শিক্ষায় সবচেয়ে উন্নত উপজেলা। এখানকার শতশত শিক্ষার্থীকে নদী পাড়ি দিয়ে কক্সবাজার শহরে স্কুল, কলেজ মাদরাসায় যেতে হয়। জন্মের পর থেকে শুনে আসছি ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে আমাদের নদী পার হতে হবে না। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের নদী পার হতে হয়। এছাড়া নৌকার লোকরা ভাড়াও অতিরিক্ত রাখে। সবমিলিয়ে এক দুঃখময় জীবন পার করছে কুতুবদিয়াবাসী।'

দ্বীপাঞ্চল সংগঠনের সম্পাদক আকবর খান বলেন, 'ফেরি সার্ভিস চালু হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে অতি সহজেই এখানে আসা সম্ভব হবে। এতে করে এলাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও বাড়বে। ফেরি চলাচল শুরু হলে ভারী যানবাহন অতিসহজে কুতুবদিয়ার গ্রামেগঞ্জে ঢুকতে পারবে।' 

তিনি আরো বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন উপকুলীয় জেলায় স্রোত সহনীয় ফেরি চালু রয়েছে।  দৌলতদিয়া, পাটুরিয়া, শিমুলিয়া,  আরিচা, বাংলাবাজার, গোয়ালন্দ, মাওয়া ঘাটে ফেরি সংযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন চলাচলে অনেক গতি এনে দিয়েছে। কেবল কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এখনো ফেরি বঞ্চিত একটি জনপদ।’ 

জানা যায়, কুতুবদিয়ার বাসিন্দা ও সাবেক সচিব আমম নাসির উদ্দিনের প্রচেষ্টায় ২০০৮ সালে সী ট্রাক চালু হয়। কয়েকমাস পর তা অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এতে স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহল ও ঘাট ইজারাদারদের ইন্ধন  রয়েছে বলে মনে করে অনেকে। যত দ্রুত সম্ভব ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি কুতুবদিয়া দ্বীপবাসীর।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়