ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বগুড়ায় লটারির নামে জমজমাট জুয়ার ফাঁদ  

এনাম আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৮, ৬ জুন ২০২২   আপডেট: ২১:২৪, ৬ জুন ২০২২
বগুড়ায় লটারির নামে জমজমাট জুয়ার ফাঁদ  

বগুড়ায় তাঁত বস্ত্র কুটির শিল্প ও পণ্য মেলায় লটারির নামে চলছে অবৈধ জুয়া। সাধারণ মানুষ লোভের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। অন্যদিকে লটারির টিকিট বিক্রির নামে মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। 

নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মেলা কর্তৃপক্ষ লটারির টিকিট বিক্রি করছে জেলাজুড়ে। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিদিন এ ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।  

গত ২৩ মে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল মাঠে মণিপুরি জামদানী বেনারশি তাঁতী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন, বগুড়া কালেক্টরেট কল্যাণ সমবায় সমিতি লিমিটেড ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী পরিষদ জেলা প্রশাসক কার্যালয় বগুড়ার আয়োজনে মাসব্যাপী এই মেলা শুরু হয়। পরদিন থেকেই আয়োজকেরা দল বেঁধে জেলা শহরের মোড়ে চেয়ার টেবিল বসিয়ে এবং উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে অটোরিকশায় ঘুরে মেলার চটকদার বিজ্ঞাপন শুনিয়ে ২০ টাকা মূল্যের লটারির টিকিট বিক্রি করতে থাকে। সারাদিন টিকিট বিক্রি শেষে রাত সাড়ে ১০টায় মেলা চত্বরে হয় লটারির ড্র। অনুষ্ঠানটি সরাসরি ক্যাবল টিভিতে সম্প্রচার করা হয়। প্রতিদিন ড্র-তে মোটর সাইকেল, ফ্রিজ, স্বর্ণালঙ্কারসহ আকর্ষণীয় সব পুরস্কার রাখা হয়। 

মেলাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মেলার টিকিট কাউন্টারে ভিড় নেই। তবে মেলার প্রবেশ পথে লটারির টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া মেলার ভেতরেও অল্প দূরত্বে চেয়ার টেবিল বসিয়ে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরের সাতমাথা, তিনমাথা, কাঠালতলা, জলেশ্বরীতলা, চারমাথা, খান্দারসহ বিভিন্ন স্থানে একইভাবে বসানো হয়েছে অস্থায়ী টিকিট কাউন্টার।  

শহরের তিনমাথা এলাকার নাদের হোসেন বলেন, তিনি প্রতিদিনই ১শ’ টাকা দিয়ে ৫টা লাটারির টিকিট কেনেন। যদি ৩-৪ হাজার টাকা খরচ করে একটা মোটর সাইকেল পাওয়া যায় এমন আশা থেকেই তিনি টিকিট কিনছেন বলে জানান। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো পুরস্কার পাননি। নাদের বলেন, ‘ভাগ্যটাই খারাপ।’ তারপরও আশা ছাড়েননি নাদের। 

মালগ্রাম চাপড়পাড়া এলাকার রিকশাচালক আজিম উদ্দিন। তিনিও প্রতিদিন ৫-৭টি টিকিট কেনেন।  আজিম বলেন, ‘পুরস্কার তো অনেক! প্রতিদিন কেউ না কেউ পুরস্কার পাচ্ছেই।’ আজিম এখন পর্যন্ত ২ হাজার টাকার লটারির টিকিট কিনেছেন বলে জানান।  

এ প্রসঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও মণিপুরি জামদানী বেনারশি তাঁতী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেনের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। মেলার কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। কার্যালয়ে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

এভাবে লটারির নামে প্রকাশ্যে জুয়ার বিরুদ্ধে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, যেহেতু মেলার আয়োজনে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারীরা রয়েছে সেহেতু আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অনুরোধ করেছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। তারা ব্যবস্থা না নিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। 

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হকের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

তাঁতবস্ত্র মেলার লটারির টিকিট বিক্রি চলছে জেলাজুড়ে- এটাকে কি বৈধতা দেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কোনো বৈধতা দেওয়া হয়নি। তাহলে কীভাবে লটারির টিকিট জেলাজুড়ে বিক্রি করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জানার পর গত ১ জুন থেকে তাদের টিকিট বিক্রি না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে বিস্মিত কণ্ঠে জানতে চান, এখনও টিকিট বিক্রি হচ্ছে নাকি? এরপরেও যদি টিকিট বিক্রি করে তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বলেন সালাহ উদ্দিন 
 

বগুড়া/তারা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়