ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ভাড়ারা ইউনিয়নে নির্বাচনী আমেজ, শঙ্কায় ভোটাররা

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ১২ জুন ২০২২  
ভাড়ারা ইউনিয়নে নির্বাচনী আমেজ, শঙ্কায় ভোটাররা

পাবনার ভাড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৫ জুন। ফলে ইউনিয়ন জুড়ে এখন নির্বাচনী আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। এর আগে সহিংসতা ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম হত্যার ঘটনায় এই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন।

এদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। রয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। ভোট নিয়ে শঙ্কা থাকলেও, ভোটারদের প্রত্যাশা শান্তিপূর্ন নির্বাচন। তবে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের  ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে এই ইউনিয়নেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হন আনারস প্রতিকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম। ওই ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর, হামলার ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরে ১৯ ডিসেম্বর ভাড়ারা ইউপি নির্বাচন বাতিল করেন নির্বাচন কমিশন।

প্রায় ছয় মাস পর আগামী ১৫ জুন পুনরায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আলোচিত সেই ভাড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচন ঘিরে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের কাছে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা।

ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদ খান বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ ভালোই ছিলো। পুলিশ প্রশাসনও ব্যাপক তৎপর রয়েছে। কিন্তু গত ৭ জুন রাত থেকে অস্ত্রসহ চরমপন্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। তারা সাইদ চেয়ারম্যানের পক্ষে কাজ করছে। এতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে ভোটাররা শঙ্কিত। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনকে অবহিত করেছি। দেখা যাক তারা কি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী ইউনিয়নে আমার তিনটি নির্বাচনী অফিস রয়েছে। অথচ নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনীর অফিসের সীমা নেই। এখন পর্যন্ত ৯টি ওয়ার্ডে ৮৫টি নির্বাচনী অফিস করেছে। সেগুলো দেখার কেউ নেই। অথচ আমি প্রচারণায় গেলে লোক বেশি হলেই আমার ওপর অভিযোগ করা হয়। নৌকার প্রার্থীর সমর্থক সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে জানে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী করছে। এ কারণে সুস্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা আছে।’

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ভাড়ারা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু সাইদ খান বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। কারণ পাবনায় একটিমাত্র ইউপিতে নির্বাচন। সবার নজর এদিকে। প্রশাসনের পর্যাপ্ত লোকবল দিয়ে কঠোর নজরদারির মধ্যে প্রচারণা করছি আমরা। ভোট একটি নাগরিক অধিকার। ভোটারদের যাকে ভালো লাগে তাকেই তারা নির্বাচিত করবেন । আমি শতভাগ জয়ী হবো বলে বিশ্বাস করি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনই বিভিন্ন ওয়ার্ডে মহিলাদের উপর মোটরসাইকেল তুলে দিচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা ঘটানোর চেষ্টা করছে। সাধারণ ভোটাররাই ভোটের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেবেন কে যোগ্য।

এই ইউনিয়নের কয়েকজন ভোটার জানান, আমরা কোনো মারামারি, বিশঙ্খলা চাই না। সুন্দর পরিবেশ চাই। যাতে কেন্দ্রে গিয়ে আমার নিজেদের ভোট নিজেরা দিতে পারি। 

ইউনিয়নের কোলাদী গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম, আরিফ হোসেন বলেনে, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমেধ্যে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আবার যদি কোনো ঝামেলা হয় এমন শঙ্কা তো থেকেই যায়। তারপরও পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়ছে। ভোটটা শান্তিপূর্ণ হলে ভোট দিতে যাবো।

সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কায়সার আহমেদ বলেন, ‘অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১৬টি কেন্দ্রের সবগুলোকেই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছি। সবগুলো কেন্দ্রে ব্যাপক নিরাপত্তা থাকবে। ভোটগ্রহণের তিনদিন আগে থেকে আমরা মাইকিং করে দেবো বহিরাগত কেউ ইউনিয়নে অবস্থান নিতে না পারে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।’

পাবনা পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যা যা করণীয় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাই তাই করা হবে। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ, র্যাব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন সুন্দর ও শান্তিপূর্নভাবে শেষ হবে।

নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভাড়ারা ইউনিয়নে মোট ভোটার ৩৮ হাজার ২৫৭ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১৮ হাজার ২৯৩ জন, পুরুষ ভোটার ১৯ হাজার ৯৬৪ জন। চেয়ারম্যান পদে তিনজন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৩ জন এবং পুরুষ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪০ জন। ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোট কেন্দ্র ১৬টি।

শাহীন/ মাসুদ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়