উত্তপ্ত রামগতি, সংঘর্ষের আশঙ্কা

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার হরনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনের চারটি ভোটকেন্দ্র লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে। এ নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। যে কোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। 

তবে নির্বাচন নিয়ে কোন সদুত্তর দিতে না পারলেও লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা সতর্ক আছেন।

আগামী ১৫ জুন (বুধবার) নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার হরণী ইউপি নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।  এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেন। এতে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে চারটি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রামগতির চারগাজী ইউনিয়ন হলো হাতিয়া উপজেলার হরনীর পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন।  

রামগতির চরগাজী ইউনিয়নের কেন্দ্রগুলো হলো- চরগাজীর টাংকি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর তেগাছিয়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোল্লা গ্রাম নূরানী মাদরাসা ও ফরেস্ট সেন্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়।

নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সম্প্রতি রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের মীর আদর্শ গ্রাম, তেগাছিয়া বাজার ও টাংকি বাজারে বিক্ষাভ মিছিল ও সমাবেশ করেন স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। 

মীর আদর্শ গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টাংকি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দারা জানান, এখানে যেসব ভোটার আছেন তারা সবাই লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের। ফলে এখানে অন্য ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এটি মেনে নেওয়া যায়না। একই সঙ্গে নির্বাচনের কারণে ব্যবসা বানিজ্যে প্রভাব পড়বে। যা আমাদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। এছাড়া অন্য এলাকার লোকজন এখানে ভোট দিতে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে সংঘর্ষের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।

চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘আমাদের এই ইউনিয়নে হরনীর বাসিন্দা নেই। ভোটকেন্দ্রগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি। কিন্তু নেওয়া হচ্ছে না। ভোট কেন্দ্র সরিয়ে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কার্যকরী সিদ্ধান্তের প্রত্যাশা করছি আমরা।’

রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘ইউপি নির্বাচন হবে পাশের উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে আর কেন্দ্র হবে রামগতির চরগাজীতে এটা হতে পারে না। এ নিয়ে আদালতেরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব ভোট কেন্দ্র নিয়ে শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা রয়েছে।’

লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, ‘ভোট কেন্দ্রগুলো সরিয়ে নিতে স্থানীয়রা বিক্ষোভ করেছে বলে শুনেছি। তাদের দাবি ছিল, হাতিয়ার ভোট কেন্দ্র যেন তাদের এলাকায় না হয়। ভোটকে কেন্দ্র করে যেন আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রয়েছে।’

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, ‘চরগাজীর তিনটি বিদ্যালয়ে হরণির ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। ওই এলাকায় কোনো বিশৃঙ্খলা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি যেন না হয় সেজন্য পুলিশ প্রশাসনসহ আমরা সতর্ক রয়েছি। সীমানা বিরোধ দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি।’

রামগতির চরগাজী ইউনিয়নের তিনটি মৌজা নিয়ে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সঙ্গে সীমানা বিরোধ রয়েছে। এনিয়ে লক্ষ্মীপুর সাব জজ আদালতে মামলা (৭৩৯/২১) চলমান। মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিরোধীয় এলাকায় স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন আদালত। কিন্তু আগামি ১৫ জুন হাতিয়ার হরণী ইউপি নির্বাচনের ৪টি ভোট কেন্দ্র চরগাজীতে স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চারটি ভোট কেন্দ্র সরিয়ে নিতে চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন সম্প্রতি ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন করেন। কমিশনের নির্দেশনায় ২৬ মে নোয়াখালী নির্বাচন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন সরেজমিন ভোট কেন্দ্র এলাকা পরিদর্শন করেছেন।