ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে নিত্যদিনের যানজটে চরম ভোগান্তি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪০, ১৫ জুন ২০২২   আপডেট: ১০:৪৪, ১৫ জুন ২০২২
টাঙ্গাইলে নিত্যদিনের যানজটে চরম ভোগান্তি

টাঙ্গাইলের প্রতিটি সড়কে যানটজ লেগেই থাকছে

টাঙ্গাইল শহরতলীর কান্দিলা গ্রামের শাহাদৎ হোসেন। রোববার (১৩ জুন) দুপুরে নিজের অসুস্থ কবুতরকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন হাসপাতালে। নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে শান্তিকুঞ্জ মোড়ে উপজেলা প্রাণি সম্পদ হাসপাতালে যেতে তার সময় লেগেছে ৩৫ মিনিটি। প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা তার ১০/১২ মিনিটে যাওয়ার কথা থাকলেও যানজটে সময় লেগেছে প্রায় তিন গুণ। 

শাহাদৎ হোসেন জানান, লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা, ইজিবাইক এবং অদক্ষ চালকদের কারণে শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে যানজট লেগেই রয়েছে। 

শুধু শাহাদৎ হোসেন নয় যানজটের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় শহরবাসীকে। অবৈধ অটোরিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণে এনে যানজট নিরসনের উদ্যোগ নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন পৌরবাসী।

পুলিশ, যাত্রী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, টাঙ্গাইল শহরের কোনো মার্কেটে পার্কিং ব্যবস্থা না থাকা, রাস্তার ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক দ্বিগুণ, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, অদক্ষ অটো চালক, যেখানে-সেখানে ইউটার্ন নেওয়া যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ। এছাড়া কুমুদিনী কলেজ মোড়, শান্তিকুঞ্জ মোড়, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, বেবিস্ট্যান্ড, বাঁকা মিয়ার ব্রিজ, হবিবুর রহমান প্লাজার পাশে এবং নিরালা মোড়সহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তার উপর সিএনজি, ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিকশার স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় যানজট চরম আকার ধারণ করেছে।  

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে টাঙ্গাইলে প্রথম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল শুরু হয়। ২০১১ সালে অটোরিকশা নিবন্ধন দেওয়া শুরু করে পৌর কর্তৃপক্ষ। ২০১৮ সালে নিবন্ধিত অটোরিকশার সংখ্যা দাঁড়ায় তিন হাজার। এর বাইরেও পাঁচ হাজার অবৈধ অটো রিকশার চলাচল অব্যাহত থাকে। সে সময় যানজট নিরসন এবং শহরে অটো চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের শেষের দিকে আরো ১ হাজার ৩০০ অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব নিবন্ধিত অটোরিকশা সকাল ও বিকেল দুই শিফটে ভাগ করে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। জোড় সংখ্যা নিবন্ধিত অটো সকাল থেকে দুপুর ২টা এবং বিজোড় সংখ্যার নিবন্ধিত অটো দুপুর ২টা থেকে রাত পর্যন্ত চলাচলে নিয়ম করা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের পর দুই শিফটের নিয়ম তেমন মানা হচ্ছে না।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল গেট, শামসুল হক তোরণ মোড়, কুমুদিনী কলেজ মোড়, সুপারি বাগান মোড়, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, বড় কালীবাড়ী মোড়, পোস্ট অফিস মোড়, বটতলা, পৌর উদ্যানের সামনে, নিরালা মোড়, বেবিস্ট্যান্ড এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশ কাজ করলেও যানজেট নিরসন সম্ভব হচ্ছে না।

শহরের কলেজ পাড়া এলাকার রাশেদ খান বলেন, ‘সদর হাসপাতাল থেকে অটোতে নিরালা মোড় আসলাম। ৫/৭ মিনিটের রাস্তা। কিন্তু যানজটের কারণে প্রায় ২৫ মিনিট সময় লেগেছে।’ 

আকুরটাকুর পাড়া এলাকার রিপন মিয়া বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি হলে কুমুদিনী কলেজ মোড়, সুপারি বাগান, নিরালা মোড়, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব মোড়, বিবেকানন্দ হাই স্কুল এন্ড কলেজের সামনে যানজেটর সৃষ্টি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের স্টেশন হওয়ায় যানজট লেগেই থাকে।’

মাহমুদুল হাসান কলেজের ছাত্র রাজিব মিয়া বলেন, ‘সরকারি এমএম আলী কলেজ ও ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় বাস শহরে প্রবেশ করলেই যানজট আরো বেড়ে যায়।’

অটোরিকশা চালক কুদ্দুস মিয়া বলেন, ‘অটো চালাতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। আমাদের ট্রাফিক আইন নিয়ে তেমন ধারণা নেই।’

জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামীম আল মামুন জুয়েল বলেন, ‘শহরের বেশির ভাগ রাস্তা প্রশস্থ না। অনেক চালক ট্রাফিক আইন ও সিগন্যাল জানে না। অটোচালকদের ধৈর্য কম। একজন যাত্রী পেলেই তারা ব্রেক করে বসে। আবার তারা যেখানে-সেখানে ইউটার্ন নেয়। বড় গাড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় অটোরিকশা থামিয়ে রাখা হয়। তখন যানজট হয়।’

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, ‘শহরবাসীকে স্বস্তি দিতে আগামী সাত দিনের মধ্যে ইজিবাইক লাল ও হলুদ রঙ করে দুই শিফটে চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়াও অবৈধ ইজিবাইককে শহরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। নিয়ম ভেঙে শহরে কোনো ইজিবাইক প্রবেশ করলে তাদের আটক করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

টাঙ্গাইলের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘শহরে দ্বিগুণ অটো রিকশা চলাচল করছে। আবার অনুমোদনহীন রিকশাও চলাচল করছে কয়েক হাজার। বাইরে থেকেও অনেক অটোরিকশা শহরে ঢুকছে। তারা যেখানে সেখানেই অটো থামাচ্ছে। তাদের মধ্যে সচেতনার অভাব রয়েছে। চালক ও যাত্রীদের সচেতন এবং দায়িত্ব নিয়ে অটোতে উঠতে এবং নামতে হবে। এতে গাড়ির চাপ বাড়লেও যানজট কম হবে।’

কাওছার/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়