ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

৬ শিক্ষার্থীর জন্য ৫ শিক্ষক 

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৩, ১৯ জুন ২০২২   আপডেট: ১৫:২৭, ১৯ জুন ২০২২
৬ শিক্ষার্থীর জন্য ৫ শিক্ষক 

যশোরের মণিরামপুরের সুজাতপুর মধ্যপাড়া শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আছেন মাত্র ছয়জন। আর এ ছয় শিক্ষার্থীকে পাঠদানের জন্য ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োজিত আছেন পাঁচজন।

শনিবার (১৮ জুন) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আসা একটি তদন্ত দল এমন তথ্য পেয়েছেন। 

১৯৮৯ সালে উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নের মশিয়াহাটি বাজারের পূর্বপাশে স্থানীয়দের দান করা জমির উপর সুজাতপুর মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০০ সালে বিদ্যালয়ে চার কক্ষের একটি একতলা ভবন নির্মিত হয়। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে আছেন বিনা পানি মণ্ডল। অন্য চার সহকারী শিক্ষক হলেন, মাধুরি বিশ্বাস, স্বপ্না বৈরাগী, বিউটি বিশ্বাস ও শিপ্রা মল্লিক। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষকই উপস্থিত আছেন। উপস্থিত ছিল ৬ শিক্ষার্থীও। শিক্ষার্থীদের সবাই চতুর্থ শ্রেণিতে একত্রে বসে ছিল। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ প্রতিষ্ঠানে প্রাক প্রাথমিক ও পঞ্চম শ্রেণিতে কোন শিক্ষার্থী নেই। প্রথম শ্রেণিতে একজন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে এক জন, তৃতীয় শ্রেণিতে দুই জন ও চতুর্থ শ্রেণিতে দুই জন শিক্ষার্থী রয়েছে। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম দিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ৫০ জনের নিচে শিক্ষার্থী রয়েছে এমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা চাওয়া হয়। এরপর সরেজমিন শিক্ষার্থীর খোঁজে নিতে শুরু করে দপ্তরটি। এসময় সুজাতপুর মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান বিনা পানি মণ্ডল তাঁর বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানান। গত বছর এ প্রতিষ্ঠানে ১৭ জন শিক্ষার্থী ছিল বলে দপ্তরকে তথ্য দেন প্রধান শিক্ষক। 

প্রধান শিক্ষকের দেওয়া তালিকা ধরে ওই বিদ্যালয়ের প্রকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুসন্ধানে নামেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পলাশ কান্তি। পরে তিনি প্রতিষ্ঠান ঘুরে ৬ জন শিক্ষার্থীর অস্তিত্ব পান। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনা পানি মণ্ডল বলেন, ‘২০১৮ সালে আমি এ প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছি। তখন ১৮ জন শিক্ষার্থী পেয়েছিলাম। এরপর শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে থাকে। প্রাক প্রাথমিকে কোনো শিক্ষার্থী নতুন ভর্তি হচ্ছে না। গত বছর ৮ জন শিক্ষার্থী ছিল।’

শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিনা পানি বলেন, ‘বিদ্যালয়টি নব্য জাতীয়করণ হয়েছে। তারপর থেকে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম থাকায় ৩-৪ বছর আগে উপজেলা শিক্ষা অফিস জানায় এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উঠে যাবে। এ কথা শোনার পর অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের আর এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাচ্ছেন না।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন নারী জানান, ‘প্রধান শিক্ষক বিনা পানি সপ্তাহে দুদিন বিদ্যালয়ে আসেন। এখানে কোনো লেখাপড়া হয় না। তাছাড়া এক গ্রামে তিনটি স্কুল রয়েছে।’

কুলটিয়া ইউনিয়নে দায়িত্বরত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পলাশ কান্তি বলেন, ‘চারমাস আগে আমি এ অঞ্চলের দায়িত্ব পেয়েছি। এসে দেখেছি সুজাতপুর মধ্যপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানিবন্দি। প্রতিষ্ঠানে ঢোকার জন্য একটি বাঁশের সাঁকো আছে। ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে এ বিদ্যালয়টি অধিকাংশ সময় পানিতে ডুবে থাকে। শিক্ষকরা পাঠদান করাতে পারেন না। এ কারণে এখানে শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক ও ৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।‘

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলায় ১০ টি বিদ্যালয় খুঁজে পাওয়া গেছে যাদের শিক্ষার্থী ৫০ জনের নিচে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, সুজাতপুর মধ্যপাড়া শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬ জন, মঠপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১ জন, কুমারসীমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৯ জন, পাঁচকাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৩ জন, দক্ষিণ পাঁচকাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৪ জন, ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৪ জন, হাটগাছা মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪০ জন, কামিনিডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৩ জন, উত্তর দহকুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪০ জন ও জোঁকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। 

এদিকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের তথ্যমতে ৫০ জনের নিচে কম শিক্ষার্থীর বিদ্যালয় সংখ্যা ১০ টি হলেও সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে উপজেলার এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০টির কম নয়। তাছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের দেওয়া তালিকা ধরে অনুসন্ধানে গেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো কম পাওয়া যাবে বলে দাবি করছেন বিদ্যালয়গুলোর আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। 

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সেহেলী ফেরদৌস বলেন, `সুজাতপুর মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৪ জন জানতে পেরে আমি একদিন প্রধান শিক্ষককে ডেকেছি। তখন তিনি স্বীকার করেছেন তাঁর প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থী। পরে আমি বিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিক অধিদপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি।' 

তিনি আরো বলেন, `আমার প্রতিবেদন অনুযায়ী শনিবার ঢাকা থেকে একজন কর্মকর্তা বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে এসেছেন।' 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপবৃত্তি বিভাগের শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, `আমি সরেজমিন তদন্ত করে সুজাতপুর মধ্যপাড়া শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছয় জন শিক্ষার্থী পেয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে ভৌগোলিক কারণে এবং শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাবে প্রতিষ্ঠানটির এ অবস্থা। আমি তদন্ত করে গেলাম। বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে পেশ করবো। বাকি ব্যবস্থা অধিদপ্তর নেবে।'

রিটন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়