ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ত্রাণের জন্য হাহাকার

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৯, ২১ জুন ২০২২   আপডেট: ১৭:৫০, ২১ জুন ২০২২
ত্রাণের জন্য হাহাকার

‘স্বামী অসুস্থ, পেশায় রিকশাচালক। হঠাৎ সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যায় ঘরে গলা পানি উঠেছে। থাকার জায়গা নেই। খাবারও নেই। সন্তানদের নিয়ে শহরের পবন কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছি। বন্যার পানিতে ঘর তলিয়ে যাওয়া গত পাঁচ দিন ধরে না খেয়ে আছি। কেউ কোনও খবর নেয় না। সোমবার (২০ জুন) সারাদিন ত্রাণের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেও পাইনি। পেটের খিদায় হাঁটতে পারছিলাম না। আজকে (২১ জুন) দুপুরে আর্মি (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী) ত্রাণ দিয়েছে। এই দিয়ে হয়তো দু’এক বেলা খেতে পারবো সন্তানদের নিয়ে।’ 

কথাগুলো রাইজিংবিডিকে বলছিলেন সুনামগঞ্জের বনানীপাড়া এলাকার রিকশাচালক ইয়াসিন মিয়ার স্ত্রী সুমি বেগম। বলেন, ‘পানিতে ঘর-দুয়ার সবকিছু তলিয়ে নিয়ে গেছে। খাবার তো দূরের কথা, থাকারও জায়গা নেই। ঘরের আসবাবপত্রসহ সবকিছু পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পাঁচ সন্তান নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে থেকেও ঘর নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। স্বামী অসুস্থ অবস্থায় আশ্রয়কেন্দ্রে পড়ে রয়েছেন। অভাবের সংসারে স্বামীকে চিকিৎসাও করাতে পারছি না। এখন স্বামী-সন্তানসহ সবাইকে নিয়ে যেন দুনিয়া অন্ধকার হয়ে রয়েছে। আল্লাহ জানে, কখন কী হয়।’

একই কথা বললেন শহরের সামিয়া বেগম, বিনা বেগম, মৌসুমিসহ শতাধিক নারী। সামিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঘরে এখনও কোমর পানি। পরিবারের পুরুষরা দিনমজুরের কাজ করেন। বন্যার কারণে তারা কাজ করতে পারছেন না। সবাই এখন না খেয়ে আছি তিন দিন ধরে। শুনলাম আর্মিরাও ত্রাণ দেয়। এই খবর শুনে সুনামগঞ্জ পৌরসভায় গেলাম। গিয়ে দেখি ত্রাণের পরিবর্তে খিচুড়ি দেওয়া হচ্ছে। একজন ব্যক্তি একটি খিচুড়ির প্যাকেট পায়। এখন এক প্যাকেট খিচুড়ি তো একজনের হবে না। সংসারে স্বামী-সন্তানসহ ছয় জন লোক এক প্যাকেট খিচুড়ি খেয়ে কীভাবে বাঁচবো। সরকারে কাছে দাবি জানাই, দ্রুত যেন সুনামগঞ্জে সকল অসহায় পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১১ বিগ্রেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার শওকত বলেন, সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বন্যার্তদের সহযোগিতার দায়িত্বে আছি। আমরা পানিবন্দি মানুষদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছি। যারা পানিবন্দি রয়েছেন, তাদের উদ্ধার অব্যাহত রয়েছে। ত্রাণের জন্য যারা আসছেন, চেষ্টা করছি তাদের খাবার বিতরণ করতে। পানিবন্দি সবারই প্রয়োজন ত্রাণ, কিন্তু আমাদের যা আছে তাদের মধ্যে বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

অন‌্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘরে ঢোকা পানি নামতে শুরু করেছে। ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে এই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। তবে এই বন্যায় সুনামগঞ্জে রাস্তা-ঘাটসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার কমেছে। বর্তমানে সুরমা নদীর পানি সমতল ৮.০৪ মিটার যা বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আল আমিন/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়