ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে মডেল মসজিদ: ৩ বছরে শেষ হয়নি ৭টির নির্মাণ, শুরুই হয়নি ৬টি

কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০০, ২৩ জুন ২০২২   আপডেট: ১৯:০১, ২৩ জুন ২০২২
টাঙ্গাইলে মডেল মসজিদ: ৩ বছরে শেষ হয়নি ৭টির নির্মাণ, শুরুই হয়নি ৬টি

টাঙ্গাইলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের একটিরও নির্মাণ শেষ হয়নি। টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলায় বরাদ্দ পাওয়া ১৩টির মধ্যে নির্মাণ চলমান রয়েছে সাতটির। নানান জটিলতায় নির্মাণ শুরু হয়নি ছয়টির। আদৌও নির্মাণ শুরু হবে কি-না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। চলমান নির্মাণ কাজের ধীরগতির ব্যাখ্যা নেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও গণপূর্ত বিভাগের কাছে। 

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামি ভ্রাতৃত্ব এবং প্রকৃত মূল্যবোধের প্রচার ও দীক্ষাদান; সন্ত্রাস ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো; নারী ও পুরুষ মুসল্লিদের জন্য নামাজ, ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দীনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভৌত সুবিধাদি সৃষ্টি করা; ইসলামিক জ্ঞান, সংস্কৃতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইসলামি মূল্যবোধের পরিচর্যা, প্রসার করা এবং সততা ও ন্যায়বিচারের প্রতি মানুষের আনুগত্য, সমর্থন সৃষ্টি করা।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও প্রকল্প তদারককারী সংস্থা গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে নুরানি ও বিথী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে টাঙ্গাইল জেলা সদর মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বাস্তবায়ন করছে। ২০১৯ সালের ১৫ মে থেকে কাজ শুরু হয়ে বর্তমানে মসজিদটির ৪র্থ তলার বীম ও ছাদের সাটারিং চলছে।

১৩ কোটি ২১ লাখ টাকা চুক্তিমূল্যে দেশ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি বাসাইলে এ মসজিদ নির্মাণ করছে। ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু হয়ে বর্তমানে মসজিদটির ৩য় তলার বীম ও ছাদ ঢালাই করা হয়েছে।

১৩ কোটি ৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে জুয়েল সিকদার এন্টারপ্রাইজ সদর উপজেলায় মসজিদ নির্মাণ করছে। ২০১৯ সালের ১০ জুন থেকে কাজ শুরু হয়ে বর্তমানে মসজিদটির ১ম তলার ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে।

১২ কোটি ৫৪ লাখ ৫ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে কেএসবিএল ও আরএসএল যৌথভাবে সখীপুরে মসজিদ নির্মাণ করছে। ২০১৯ সালের ১৫ মে থেকে কাজ শুরু হয়ে বর্তমানে মসজিদটির ১ম তলার ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে।

১১ কোটি ৩৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে কেএসবিএল ও আরএসএল যৌথভাবে দেলদুয়ারে মসজিদ নির্মাণ করছে। ২০১৯ সালের ৩০ জুন থেকে কাজ শুরু হয়ে বর্তমানে মসজিদটির নিচ তলার ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে।

দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মারুফ বলেন, ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। দেলদুয়ার মসজিদের ঠিকাদার সরোয়ার হোসেন খান বলেন, করোনা ও বর্ষার কারণে কাজ বন্ধ ছিল। প্রথম তলার কাজ চলমান রয়েছে। কত দিনে শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না। 

দেলদুয়ার, নাগরপুরে মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে জানেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু। 

১২ কোটি ৯০ লাখ ৬ হাজার টাকাচুক্তি মূল্যে মো. মাহফুজ খান লিমিটেড ও মেসার্স দাস ট্রেডার্স যৌথভাবে কালিহাতীতে মসজিদ নির্মাণ করছে। ২০১৯ সালের ৬ জুন থেকে কাজ শুরু হয়ে বর্তমানে মসজিদটির পাইল ড্রাভিংয়ের প্রস্তুতি চলছে।

১২ কোটি ৫৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে নুরানী কনট্রাকশন ধনবাড়ীতে মসজিদ নির্মাণ করছে। ২০১৯ সালের ১০ জুন থেকে কাজ শুরু হয়ে বর্তমানে মসজিদটির ৩য় তলার ছাদ ঢালাই হয়েছে। পাশাপাশি ইটের গাথুনী, সীমানা দেয়াল ও অন্যান্য কাজ চলমান রয়েছে।

এ দিকে স্থানীয় এমপি ও নাগরপুরে এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার রেষারেষির কারণে নাগরপুরে এখনও নির্মাণ শুরু হয়নি। নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, স্থান নির্বাচন নিয়ে জটিলতা আছে। একেক জন একেক জায়গায় মসজিদটি নির্মাণের জন্য দাবি করছেন। 

মালিকানা নিয়ে আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করায় ভূঞাপুরে মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। ঘাটাইল ও গোপালপুর উপজেলায় স্থান চূড়ান্ত হয়নি। স্থান নির্বাচন করা হলেও ২৩ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করার জন্য প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে দরপত্র আহ্বানের নির্দেশনা পাওয়া না যাওয়ায় মধুপুরে কাজ শুরু হয়নি। মির্জাপুর উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়নি। 

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, বিভিন্ন জটিলতার কারণে এখনও কোনও মসজিদ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। নির্মাণের জন্য যে মেয়াদ ছিল পরবর্তীতে আবারও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি জানান, গোপালপুরে স্থান চূড়ান্ত করা হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য অন্য জায়গা নির্ধারণ করেন। কিন্তু সেই জমির এখনও অনুমোদন করাতে পারেননি তিনি। ভূঞাপুরে একই অবস্থা। অপরদিকে নাগরপুরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও এক আওয়ামী লীগ নেতার মতবিরোধে জমি নির্ধারণে সময় লেগেছে। মির্জাপুরে দ্রুত সময়ের মধ্যে জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, যে কয়টার মসজিদের কাজ শুরু হয়েছে, সেগুলোর ফান্ডিং এর সমস্যা ছিল। ঠিকাদাররা নিজেদের টাকায় কাজ করেছেন। বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আশা করেন, আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে। 

স্থান নির্বাচন ও জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন কারণে যে ছয়টি মসজিদের কাজ শুরু হয়নি, সেগুলো তাড়াতাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে বলে জানান তিনি। 

কাওছার/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়