ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

দ্বিতীয় দফার বন্যায় লালমনিরহাটের চরাঞ্চলে হাহাকার

ফারুক আলম, লালমনিরহাট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ২ জুলাই ২০২২   আপডেট: ১০:৫৭, ২ জুলাই ২০২২
দ্বিতীয় দফার বন্যায় লালমনিরহাটের চরাঞ্চলে হাহাকার

লালমনিরহাট জেলায় ছোট বড় ১৭টি নদীর মধ্যে ধরলা-তিস্তাই প্রধান। শুষ্ক মৌসুমে একেবারেই জলহীন বালুচর, অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ বানে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব। এখন লালমনিরহাটে দ্বিতীয় দফার বন্যা চলছে। 

চর ফলিমারি, বোয়ালমারি, গোবর্ধন, চর খুটামানা, খাটটামারি, চর ওসমানী নগর, চর খুনিয়াগাছ, শৌলমারী, চরইচলিসহ বেশ কিছু চরের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। 

সরেজমিনে দেখা যায়, এসব চরের ঘরবাড়ির ভিতর দিয়ে স্রোত যাচ্ছে। কোনো কোনো বাড়ির চতুর্দিকে পানি। গৃহবন্দি মানুষ।খাবার নেই ঘরে। কেউ সারাদিনে একবার খাবার রান্না করেছেন চৌকির ওপর বসানো অস্থায়ী চুলায়। অধিকাংশ বাড়িতে পুরুষ মানুষ নাই। সকালে বেরিয়ে গেছেন হাটে বাজারে। ফিরবেন রাতে। সারাদিনে একবারই ফিরেন তারা। জলবন্দি আর অর্ধাহারে থাকে নারী ও শিশু। তাদের যাবার জায়গা নেই। তিনবার চারবার পরনের কাপড় বদলাতে হয়। বারবার ভেজা কাপড় পরিধান করে কারো কারো শরীরে হয়েছে চুলকানি (স্কাবিকস), দাদ ফাঙাসসহ নানা পানিবাহিত রোগ। 

দেখা যায়, শ্যালো চালিত নৌকা নিয়ে লোকজন বানে ভেসে আসা ছোট কাঠ, আধাপাকা ফসল কিংবা কোনো খাবারের সন্ধান করছেন। সামান্য উঁচু জায়গায় সমন্বিতভাবে রাখা হয়েছে গরু, ছাগল, হাঁসমুরগি। এসব প্রাণিরও খাবার নেই।

পেনসিল বেগম (৭৫) বলেন, রান্নাবান্না করা খুব কষ্ট। কোনো ডাক্তার-কবিরাজ নাই।  ল্যাট্রিন নাই। মেয়ে মানুষের খুব কষ্ট।

চৌকির ওপর রান্না করা রুবিনা বেগম (৩৫) বলেন, রোগ ব্যাধি হচ্ছে। সরকারি কোনো ডাক্তার নাই। একটা স্যালাইন পর্যন্ত নাই।দুইটা বাচ্চা নিয়া দুই দিন ধরে কেবল আলু ভর্তা ভাত চড়িয়েছি।

ঈমান আলী (৯০) বলেন,স্যালাইনের কোনো খবর নাই। গরুছাগলের কোনো ডাক্তার নাই। কিভাবে মানুষের জীবন কাটবে। 

মোগলহাট ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, মোগলহাটের ধরলা অববাহিকা এবং মেইনল্যান্ডে ২০০০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। ইউনিয়নের ছোট ছোট কালভার্টের মুখ বন্ধ করা। ফলে ওসমানগণীর চর,খাটামারি চর, চর ফলিমাড়ীসহ অনেক চরে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এযাবৎ ১০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আবার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী জানান, তার নিজ ইউনিয়নে ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন।
জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার (ত্রাণ ও দুর্যোগ) নাজিয়া নওরীন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এ পর্যন্ত ৪২৩.৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। 

ইউনিয়ন পরিষদ ও সরেজমিন তথ্য মতে, দ্বিতীয় দফার বন্যার পানিতে লালমনিরহাট সদরের ৬ ইউনিয়ন, খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, কুলাঘাট, বড়বাড়ী, মোগলহাট, আদিতমারীর উপজেলার দুর্গাপুর, পলাশীর কিছু অংশ, মহিষখোচা, কালিগঞ্জ উপজেলার তুসভান্ডার, কাকিনা, ভোটমারি, পাটগ্রাম উপজেলার  শ্রীরামপুর, বুড়িমারী, কুচলিবাড়ী, জগৎবেড়, জোংড়া, বাউরা, হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, সিন্দুর্না, গড্ডিমারি, বড়খাতা ও সানিয়াজান ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

লালমনিরহাট সদরের শিবেরকুটি গ্রামের শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে নির্ঘুম রাত কাটছে কয়েক হাজার পরিবারের। ২৯ জুন বিকেলে বাঁধটিতে ধরলার স্রোতের টানে ফাটল দেখা দেয়।

ধরলা সেতু থেকে মোগলহাট ইউনিয়নের ১০ কিলো বাঁধটি ভাঙলে লালমনিরহাট শহর প্লাবিত হবে আশঙ্কায় ভূগছেন এলাকাবাসী। 

বাঁধটি রক্ষায় কর্মরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরমান সরকার, তাজুল ইসলাম, ফরিদ আলী-এরা জানান, বাঁধটি শহর রক্ষা বাঁধ নামেই পরিচিত। বাঁধটিতে ফাটল দেখা দেওয়ার পর তারা কাজ শুরু করেছেন। যতো বালির বস্তা লাগবে, ততোগুলোই ফেলা হবে বলে জানান তারা। 

/টিপু/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়