ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সেতু-কালভার্ট থাকলেও, হারিয়ে যাচ্ছে খাল!

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৪, ২ জুলাই ২০২২   আপডেট: ১৬:১৬, ২ জুলাই ২০২২
সেতু-কালভার্ট থাকলেও, হারিয়ে যাচ্ছে খাল!

ছবি: রাইজিংবিডি

পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সড়ক পথে সেতু-কালভার্ট আছে, কিন্তু খাল নেই। মাটিভরাট হওয়ায় সেতু-কালভার্টগুলো দৃশ্যমান থাকলেও খালগুলো অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। ফলে সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে পানি যাতায়াত করতে পারছে না। লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুগুলো নির্মিত হলেও, সেগুলো কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলছে।

এক সময় পাবনা-বাঘাবাড়ি সড়কের চাটমোহর অংশ, চাটমোহর-ছাইকোলা সড়কসহ অন্যান্য কিছু সড়কের দু’পাশে বেশকিছু খাল ছিল। যাতায়াতের সুবিধার কারণে, সড়ক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সরকার বিভিন্ন সময়ে খালগুলোর ওপর সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করে। কিন্তু দুই পাশের জমিমালিকরা তাদের জমি ভরাট করে ফেলায় সেতু-কালভার্ট দাঁড়িয়ে থাকলেও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে খালগুলো। চাটমোহর-ছাইকোলা সড়কের খালগুলোর অনেকাংশ দখল করে ভরাট করেছেন স্থানীয়রা। এতে পানির স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনা-বাঘাবাড়ি সড়কের চাটমোহর অংশে উথুলী, হারান মোড় এলাকাসহ বেশকিছু স্থানে সেতুর দু’পাশের জমির মালিকরা তাদের জমি ভরাট করে ফেলায় সেতু তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারিয়েছে। চাটমোহর হাসপাতাল গেট থেকে ছাইকোলা অভিমুখী সড়কের ধানকুনিয়া, কাটেঙ্গা ও ছাইকোলা এলাকায় গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি কালভার্ট নির্মিত হয়েছে। কালভার্টগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সেতু-কালভার্টগুলোর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

চাটমোহর-ছাইকোলা সড়কের ধানকুনিয়া থেকে ছাইকোলার দূরত্ব প্রায় ছয় কিলোমিটার। এ ছয় কিলোমিটার এলাকার গ্রামগুলোর পূর্ব পাশে গুমানী নদী এবং পশ্চিমে কয়েকটি বিল। নদীর সাথে বিলের সংযোগ খালগুলো দিয়ে অতীতে বিলে বর্ষার পানি প্রবেশ করতো এবং বর্ষা শেষে পানি বেড়িয়ে যেত। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময়ে মাটি ফেলে সবগুলো খাল ভরাট করা হয়েছে। পশ্চিম পাশের বিলগুলোর পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিলচলন ইউনিয়নের নটাবাড়িয়া ও চরসেন গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া কিনু সরকারের জোলায় (খালে) একটি স্লুইস গেট নির্মিত হয়েছে। গুমানী নদীর সাথে বিলের সংযোগ খালগুলো ভরাট করে ফেলার পরও খালগুলোর ওপরে অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মিত হয়েছে। সড়কটির এ অংশের কোনও খালই এখন সচল নেই। এ ছাড়া আরও কিছু সড়কের সেতু সংলগ্ন খাল ভরাট করে ফেলছেন জমির মালিক পক্ষ।

উপজেলার কাটাখালী গ্রামের ইশারত আলী বলেন, নাটোরের জোনাইলের সোন্দভা এলাকা থেকে বড়াল নদীর একটি খাল কাটাখালী-বাঙ্গালা হয়ে চিকনাই নদীতে পড়েছে। এ খালের প্রায় পুরোটাই বিভিন্ন পন্থায় অসাধুরা দখল করে ভরাট করে ফেলেছে। কাটাখালী বাজারের পূর্ব অংশে এ খালের ওপর একটি সেতু নির্মিত হয়েছিল অনেক আগে। সেতুটি এখনও দাঁড়িয়ে থাকলেও দু’পাশ ভরাট করায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে খালটি।

খাল ভরাটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চলনবিল রক্ষা আন্দোলন ও বড়াল নদী রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন, অননুমোদিত খাল ভরাটের অধিকার কারও নেই। এগুলো দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। প্রশাসন অনেক সময়ই দেখে না। প্রশাসনের অবহেলার কারণে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে জমির মালিক বা এলাকাবাসী খাল ভরাট করছেন। পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বন্যার পানি সুষমভাবে বণ্টিত হচ্ছে না। কোনও কোনও এলাকায় অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, আমরা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে কাজ করি। অনেক সময়ই বিভিন্নভাবে কেউ কেউ কালভার্ট বা সেতুর সম্মুখ ভাগ ভরাট করেন। তবে সেটি যদি সেতু বা কালভার্টের মুখে হয়, তাহলে দেখতে পারি। তবে যদি দূরে হয় তাহলে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখতে পারে। তারপরও যেহেতু আপনারা জানালেন, আমরা বিষয়গুলো দেখব।

শাহীন রহমান/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়