ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্কুলমাঠে পাকা সড়ক, ঝুঁকিতে ৭০০ শিক্ষার্থী

শেরপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০১, ৩ জুলাই ২০২২   আপডেট: ১৪:০৬, ৩ জুলাই ২০২২
স্কুলমাঠে পাকা সড়ক, ঝুঁকিতে ৭০০ শিক্ষার্থী

সড়কের পাশেই স্কুল হওয়ায় পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের।

১৫ থেকে ২০ শতক জায়গার উপর একটি খেলার মাঠ। এই মাঠের দুই পাশে রয়েছে দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও একটি ধর্মীয় স্থাপনা (মাজার)। সম্প্রতি এই মাঠ চিরে তৈরি করা হয়েছে আট ফুট প্রশস্তের পাকা সড়ক। ওই সড়ক দিয়ে এখন চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। এতে ওই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭০০ শিক্ষার্থী ঝুঁকির মধ্যে আছেন। 

জানাগেছে, শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনিয়া বাজারের পাশেই ব্রিট্রিশ শাসনামলে (১৯৩৮ সাল) প্রতিষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী কুড়িকাহনীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কুড়িকাহনিয়া সাউথ কুরুয়া উচ্চ বিদ্যালয়। দুইটি প্রতিষ্ঠানের একর একর জায়গা থাকার পরেও মালিকানা দ্বন্দ্বের কারণে বর্তমানে ওই মাঠ এখন ৩ থেকে ৪ কাঠায় পোঁছেছে। তার উপর সম্প্রতি তৈরি হয়েছে পাকা সড়ক। যে সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ট্রলি, অটো, সিএনজি, মোটরসাইকেল, রিক্সা ও বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। ফলে শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের খেলাধুলার অধিকার থেকে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানান, মাঠের অভাবে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব হয় না। টিফিন কিংবা অন্য বিরতির সময় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা শ্রণিকক্ষে বসেই সময় পার করে। বিক্ষিপ্ত ও বিছিন্ন ভাবে শ্রণিকক্ষে জাতীয় সঙ্গীত-শপথ বাক্য পাঠ করানো হলেও খেলাধুলা ও শরীরচর্চা হয় না। এতে করে অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সহশিক্ষা কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়ছে এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা জানান, শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ দখল করে সড়ক নির্মাণের ফলে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের দাবি, সড়ক হোক স্কুলের দক্ষিণ দিক দিয়ে, মাঠের ভেতর দিয়ে নয়। 

কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ওই সড়ক পাকা করার সময় স্থানীয় জনগণ বাধা দিলে মাঠের উপর সড়ক নির্মাণ বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকে। তবে অদৃশ্য শক্তির ইশারায় আবার শুরু হয় খেলার মাঠে সড়ক তৈরির কাজ। 

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মো. মুস্তফা বলেন, ‘দুই স্কুলের মাঝখান দিয়ে সব সময় বিভিন্ন যানবাহন যাতায়াত করায় যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমার দুইটা বাচ্চা ওই স্কুলে পড়াশুনা করে। মাঠের মাঝখান দিয়ে পাকা সড়ক থাকায় আমি সব সময় চিন্তায় থাকি।’ 

কুড়িকাহনিয়া সাউথ কুরুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়া ইসলাম বলেন, ‘মাঠ না থাকায় আমরা বিদ্যালয়ে এসে কোনো খেলাধুলা ও শরীর চর্চা করতে পারিনা। এতে আমাদের পড়াশুনায় মন বসেনা। টিফিন হলে ক্লাসে বসে থাকি।’ 

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মিনাল মিয়া বলেন, ‘ক্লাসের সময় ওই সড়ক দিয়ে ট্রলি, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল যাওয়া আসা করে।  যানবাহনের শব্দে ক্লাসে স্যারের কথা ভালো ভাবে বুঝতে পারিনা। অনেক সময় উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে স্কুলের মাঠ দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন যাতায়াত করায় আমাদের পড়ালেখার সমস্যা হয়। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘ঘটনাটি স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে অবগত করা হয়েছে। মাঠের মাঝখান দিয়ে সড়ক নির্মাণ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার বিঘ্ন ঘটাসহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি এবং বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।’ 

কুড়িকাহনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মর্জিনা খাতুন মুঠোফোনে বলেন, ‘মাঠের অভাবে বিদ্যালয়ে পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ব্যহত হচ্ছে। এমনকি আমাদের বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযাগিতাও করতে হয় দায়সারা ভাবে। অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের মাঠে যা মাটেও কাম্য নয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্কুলের মাঠ তৈরিসহ ওই সড়ক অপসারনের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি (এডহক) মো. জিয়াউর রহমান মানিক বলেন, ‘এই সড়কটি আমার দ্বায়িত্ব গ্রহণের আগে তৈরি করা হয়েছে। তবে কোমলমতি শিশুদের খেলার মাঠ দেওয়া আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। ওই সময় স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যস্থতায় সড়কটি তৈরি করা হয়েছে বিধায় সাধারণ জনগনের বাঁধা দেয়ার মতো পরিবেশ ছিলোনা। তবে স্কুলের জন্য একটি ৪তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন তৈরি হওয়ায় পুরাতন ভবন ভেঙ্গে মাঠ তৈরি করা যেতে পারে এবং মাঠের মাঝখান থেকে ওই সড়ক সরিয়ে মাঠের শেষ প্রান্ত দিয়ে দেয়াল তৈরি করে শিশুদের নিরাপদ করা যেতে পারে।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ খান নুন বলেন, দুইটি স্কুল এক সাথে হওয়ার পরেও স্কুলের মাঠ আগে থেকেই ছোট। আবার দুইটি স্কুলেরই নতুন করে আলাদা আলাদা ভবন তৈরি করে মাঠকে আরও ছোট করা হয়েছে তার উপর আবার পাকা সড়ক তৈরি হয়েছে। এতে ছেলে-মেয়েরা সহশিক্ষার অংশ হিসেবে, পিটি- প্যারেড, শারীরিক কসরত ও খেলাধুলা করতে পারছে না। তবে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন বিল্ডিং ও বিএডিসির একটি পরিত্যক্ত ভবন ভেঙ্গে স্কুলের পেছন দিয়ে একটি বিকল্প সড়ক তৈরি করে শিশুদের নিরাপদ করা যেতে পারে। 

শ্রীবরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডিএম শহিদুল ইসলাম বলেন, এ সড়ক দিয়ে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ চলাচল করে এবং ম্যাপে সড়ক থাকায় আমরা চাইলেও সেই সময় সড়ক তৈরিতে বাঁধা দিতে পারিনি। তবে ওই সড়ক পাকাকরণের ফলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে বলেও তিনি স্বীকার করেন। তবে পুরাতন বিল্ডিং ভেঙ্গে মাঠ বড় করে মাঠের মাঝখান থেকে সড়কটি সরাতে সহযোগীতার কথাও তিনি বলেন।

তিনি আরও বলেন, সরকারি স্থাপনা ভাঙার একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে। আমরা বিষয়টি আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

তারিকুল/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়