ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে ঢেঁড়স ক্ষেতে মোজাইক ভাইরাস, চিন্তায় কৃষক

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪২, ৩ জুলাই ২০২২   আপডেট: ১৭:০৪, ৩ জুলাই ২০২২
লক্ষ্মীপুরে ঢেঁড়স ক্ষেতে মোজাইক ভাইরাস, চিন্তায় কৃষক

ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্থ ঢেঁড়স ক্ষেত

লক্ষ্মীপুরে ৩ গ্রামের শতাধিক কৃষকের চাষকৃত অন্তত ২০ একর ঢেঁড়স ক্ষেতে হানা দিয়েছে মোজাইক ভাইরাস। ভাইরাসের প্রভাবে এসব এলাকার ঢেঁড়সের গাছ-পাতা ও ফলন হলুদবর্ণ ধারণ করে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আশে পাশের অন্যান্য ফসলের মাঠেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। এতে করে কৃষকরা বড় ধরণের আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ে বর্তমানে চরম হতাশা ও দিশেহারা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। 

মূলত নিম্মমানের বীজ উচ্চমূল্যে সরবরাহ করাকে অভিযোগ হিসেবে উল্লেখ করেন কৃষকরা। তবে দোকানিরা বলছেন আবহাওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। 

এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, সাধারণত মানহীন বীজ থেকেই ভয়ঙ্কর এ ভাইরাস ছড়াই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। 
তবে সচেতন মহল বলছেন, বীজ ব্যবসায়ীদের উপর নজরদারি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকী থাকলে নিম্মমানের বীজ উচ্চমূল্যে কৃষকদের কাছে বিক্রি করার সুযোগ থাকতো না।

লক্ষ্মীপুর শহরের মাসুদ বীজ ভান্ডারের বিরুদ্ধে বীজ নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। শনিবার (২ জুলাই) সকাল ১১ টার দিকে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন কৃষকরা।

মানববন্ধনে কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, বাজারে মাসুদ বীজ ভান্ডারসহ কয়েকজন দোকানি নিম্মমানের বীজ প্যাকেটজাত করে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এতে করে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মাঠের পর মাঠ ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আশ পাশের বটবটি-করলা ও শষা ক্ষেতসহ অন্যান্য ফসলের মাঠেও এর প্রভাব পড়ছে। তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছরের ভালো ফলনে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ঢেঁড়সের আবাদ করেছেন লক্ষ্মীপুরের কৃষকরা। চলতি বছর জেলায় ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে এ সবজি আবাদ হয়েছে। এসব ফসল বিক্রি করে পরিবার নিয়ে জীবিকানির্বাহ ও ভালো থাকার আশা ছিল তাদের। কিন্তু তা আর হলো না। ফলনের মূহুর্তে এসে ভেঙ্গে গেলো তাদের স্বপ্ন পূরুণের সেই প্রত্যাশা। 

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদরের টুমচর, কালিরচর ও ভবানীগঞ্জ গ্রামের শতাধিক চাষী প্রায় ২০ একরে ঢেঁড়স চাষ করে এখন বিপাকে পড়েছেন। তাদের কৃষি মাঠে বর্তমানে হানা দিয়েছে মোজাইক ভাইরাস। এর প্রভাবে ঢেঁড়স গাছ-পাতা ও ফলন হলুদবর্ণ হয়ে পঁচে যাচ্ছে। এতে করে বাজারে এসব ফলন বিক্রি হচ্ছেনা। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে মাসুদ বীজ ভান্ডারের মালিক মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু দোকানে থাকা মাসুদের ভাগ্নে জানান, এ বছর আবহাওয়ার কারণে সব বীজের মধ্যে ভাইরাস চলে আসছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন বলেন,  ঢেঁড়স, পেপেসহ এ জাতীয় সবজি চাষ করার সময় ভালো জাত এবং ভালো উৎস দেখে বীজ কিনতে হবে। ঢেঁড়সে মাধ্যমে এ ভাইরাসটি ছড়ায়। তাছাড়া ছোট ছোট পোকার মাধ্যমে এক গাছ থেকে অন্য গাছে দ্রুত ভাইরাসটির বিস্তার ঘটছে। এটি যদি ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে পুরো ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে ফেলে।  পরপর দুই বছর একই জমিতে একই ফসল চাষ না করা এবং এই বছর যে জমিতে ঢেড়স চাষ করা হয়েছে, আগামী বছর ওই জমিতে অন্য ফসল করলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে। 

জাহাঙ্গীর লিটন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়