ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মেহেরপুরে চাহিদার দ্বিগুণ কোরবানির পশু, দাম নিয়ে শঙ্কা

মেহেরপুর প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০১, ৪ জুলাই ২০২২   আপডেট: ১২:০৭, ৪ জুলাই ২০২২
মেহেরপুরে চাহিদার দ্বিগুণ কোরবানির পশু, দাম নিয়ে শঙ্কা

আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ঈদ উল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে তাই গরু-ছাগল বিক্রি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেহেরপুরের খামারিরা। এই জেলার অনেক খামারি অধিক লাভের আশায় তাদের পালিত পশু রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ব্যাপারিরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু-ছাগল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া কোরবানি দিতে ইচ্ছুক ক্রেতারাও খামার ও বাড়িতে গিয়ে গৃহস্থদের কাছ থেকে দামদর করে পছন্দের পশুটি কিনছেন। 

খামারিরা জানান, এ বছর জেলায় ১০০ কোটি টাকার বেশি কোরবানির পশু বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শেষ মুহূর্তে যদি ভারত থেকে গরু আমদানি হয় তাহলে তাদের লোকসান গুনতে হতে পারে। এছাড়া এসব পশু বিক্রি না হলে বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় খামারিরা।

জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের হিসেব মতে, এবছর মেহেরপুর জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮৬টি কোরবানি যোগ্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এ জেলায় বাণিজ্যিক ও পারিবারিক ২৯ হাজার ২৫২ টি খামারে ৫৮ হাজার ৩৬৩টি গরু, ৫৮২টি মহিষ, এক লাখ ২৮ হাজার ৮৪১টি ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মোটাতাজাকরণে কৃত্রিমপন্থা অবলম্বন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এ জেলার সব খামার ও গৃহস্থরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার ব্যবহার করছেন পশু পালনের ক্ষেত্রে।

মেহেরপুরের মুজিবনগরের রাজাবাবু এখন দেশ সেরা গরু। ৪০ মন ওজনের এই গরুর দাম দেওয়া হয়েছে ২৫ লাখ। এ পর্যন্ত দাম উঠেছে ১৫ লাখ। তবে এই দামে বিক্রি করতে নারাজ খামারী ইনসান আলী। তার মতে ১৫ লাখে বিক্রি করলে লাভ হবে না। আড়াই বছর ধরে প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ টাকার খাবার খায়ানো হয়েছে রাজাবাবুকে। সে হিসেবে দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রেতা ছাড়া এ গরুর দর্শনার্থীই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার আকবর ডেইরি খামারের সত্তাধীকারী সেন্টু বলেন, ‘গাভীর পাশাপাশী কোরবানীকে সামনে রেখে ষাঁড় গরু প্রস্তুত করেছি ৮টি। তবে এখনো পর্যন্ত সেগুলো বিক্রি করতে পারিনি। দু-একজন ব্যবসায়ী আসলেও দাম চাহিদার অর্ধেকও দিতে চাচ্ছে না।’ 

গাংনী উপজেলার বালিয়াঘাট মা এগ্রো ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী হাজী আবু নাঈম জানান, ‘খামারে ৬০ টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি এবছর কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সম্পূর্ণ দেশি খাবার খাওয়ানো হয়েছে গরুগুলোকে। বিচালী, ছোলা, খৈল, চালের কুড়াসহ অন্যান্য দেশীয় খাবার দিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে গরু পালন করা হচ্ছে।’ 

গাংনীর মালসাদহ গ্রামের গরুর খামারি এনামুল হক জানান, বেশ কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে তিনি খামারে গরু পালন করে আসছেন। গেলো কোরবানিতে ভালো দাম না পাওয়ায় সব গরু বিক্রি করিনি। পুরানো গরুর সাথে নতুন যোগ করে বর্তমানে খামারে ১৮টি নেপালী ও ১২টি হরিয়ান জাতের গরু আছে। এবছর ভালো দামে বিক্রি করার আশা করছেন এ খামারি। তবে শেষ পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবে কিনা এ নিয়ে দুঃচিন্তাই আছেন তিনি। 

একই উপজেলার ধানখোলা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ জানান, গত বছর করোনার মাঝেও ৯০টি গরু ঢাকায় নিয়েছিলেন। এবার অন্তত ২০০ গরু ঢাকার বিভিন্ন পশুহাটে তুলবেন। ইতোমধ্যে গ্রামে গ্রামে ঘুরে গরু পছন্দ করছেন। পছন্দের গরুর দাম নির্ধারণ করে অগ্রীম কিছু টাকাও দিয়ে আসছেন খামারিকে। তবে ঢাকার বাজারগুলো এখনো সেভাবে জমে উঠেনি। তাই গরুগুলো হাটে নিতে পারছেন না বলেও জানান তিনি। 

মেহেরপুর জেলা প্রণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান জানান, এবার মেহেরপুরে চাহিদার দ্বিগুন কোরবানির পশু প্রস্তুত আছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য বাজারেও পশুগুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হবে। 

তিনি আরো বলেন- মেহেরপুর বাংলাদেশের ভারত সীমান্ত ঘেষা জেলা। তাই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অবৈধভাবে যাতে ভারত থেকে গরু আসতে না পারে সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া হাটে স্টরয়েড ও হরমন ব্যবহারে মোটাতাজাকরণ গরু না উঠতে পারে সেজন্য হাটগুলোতে মোবাইল কোর্টসহ প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাদের একাধিক টিম কাজ করছে।

মহাসিন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়