ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

হাসপাতালে ফ্যান সংকট, গরমে বিপাকে রোগীরা

আবু নাঈম, পঞ্চগড় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ১৭ জুলাই ২০২২   আপডেট: ১১:৩৭, ১৭ জুলাই ২০২২
হাসপাতালে ফ্যান সংকট, গরমে বিপাকে রোগীরা

ফ্যান না থাকায় তীব্র গরমে কষ্ট করতে হচ্ছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীেদের

তীব্র দাবদাহ আর ভ্যাপ্সা গরমে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে রংপুরসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের জনজীবন। হাসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে প্রাণীকূলে। এরই মধ্যে বেড়েই চলেছে সর্দি-জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা। তাই সেবা নিতে প্রতিদিনই পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ভিড় বাড়ছে মানুষদের। কিন্তু ফ্যান সঙ্কটের কারণে সেবা নিতে এসে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা।

পেটের ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে (পুরুষ) ভর্তি হয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম (৩০)। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে ফ্যানের বাতাস না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাকে। অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই তিনি বলেন, ‘পেটের ব্যাথার চেয়েও যেন বেশি অসহনীয় এই গরম। অথচ, আমার বেডের ওপরে সিলিংফ্যান নেই। সারাদিন ছটফট করে পার করেছি। রাতটা কিভাবে কাটাবো ভেবে পাচ্ছিনা।’

শনিবার (১৬ জুলাই) রাতে সরেজমিনে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেডিসিন ওয়ার্ডে (পুরুষ) ১০টি ফ্যানের মধ্যে চারটি নষ্ট হওয়ায় তা খুলে নেওয়া হয়েছে। একটি ফ্যান অকেজো অবস্থায় রয়েছে অনেকদিন ধরে। বাকি পাঁচটি ফ্যানদিয়ে চলছে রোগীদের চিকিৎসা। ফলে অনেক রোগীকেই টেবিল ফ্যান অথবা হাতপাখা ব্যবহার করতে দেখা গেছে। 

একই অবস্থা হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডগুলোতেও। হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ৮টি ফ্যানের মধ্যে রয়েছে ৫টি ফ্যান। মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ৬টির মধ্যে নেই একটি, শিশু ওয়ার্ডে ১০টির মধ্যে তিনটি ফ্যান অকেজো অবস্থায় রয়েছে।

হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে কথা হয় রাসেল নামে এক রোগীর মা আমিরন বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ফ্যান না থাকায় রোগীদের পাশাপাশি তাদের স্বজনরাও কষ্ট পাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে টেবিল ফ্যানটি নিয়ে এসেছি। যাতে আমার অসুস্থ ছেলের কষ্ট একটু হলেও কম হয়।’

গরম থেকে বাঁচতে অনেক রোগীকে টেবিল ফ্যান ব্যবহার করতে দেখা গেছে

তেঁতুলিয়ার বুড়াবুড়ি এলাকার নুর জামাল তার ৫ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে গত চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশু ওয়ার্ডের চার নম্বর বেডে দেওয়া হইছিলো। কিন্তু বেডের উপরে সিলিং ফ্যান নেই। ফলে এই গরমে খুব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. কাওসার আহমেদ সিলিংফ্যান সঙ্কটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘বজ্রপাতে অনেকগুলো সিলিংফ্যান নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না থাকায় আমরা গণপূর্ত বিভাগকে লিখিত আকারে জানিয়েছি এবং ৪৯ টি ফ্যানের চাহিদা দিয়েছি। আমরা তাদের প্রতিনিয়ত বলছি ফ্যানগুলো খুব দ্রুত প্রয়োজন। যেহেতু অনেকগুলো ফ্যানের বিষয় এজন্য হয়তো সময় লাগছে তাদের।’

পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল হাসান বলেন, হাসপাতালে ৪৯টি সিলিংফ্যানের প্রয়োজন। ফ্যানগুলোর দাম পড়বে দেড় লাখ টাকা। যা আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এজন্য আমরা প্রায় ১৫ দিন আগে গণপূর্ত বিভাগকে চাহিদা দিয়েছি।  কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কোন উদ্যোগ নেয়নি। তবে গতকাল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, খুব দ্রুতই এই সঙ্কট নিরসনের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

পঞ্চগড় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান সরকার বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবগুলো ফ্যান হয়তো রিপ্লেস করা সম্ভব না।  কারণ, আমাদের অর্থবছর শেষ হয়ে গেছে। নতুন অর্থবছর চলছে। যেগুলো রিপ্লেস না করলেই নয় সেগুলো দ্রুত রিপ্লেস করে দেবো এবং বাকিগুলোর বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেবো।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়