ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মানিকগঞ্জে রুট পারমিট ছাড়াই চলছে দুই-তৃতীয়াংশ বাস

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৩, ২৫ জুলাই ২০২২  
মানিকগঞ্জে রুট পারমিট ছাড়াই চলছে দুই-তৃতীয়াংশ বাস

মানিকগঞ্জের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতিদিন তিনশোর মতো যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহন পাটুরিয়া-গাবতলী,আরিচা-গাবতলী ও চিটাংগাং রোডে যাতায়াত করে। এসব যাত্রীবাহী পরিবহনের দুই-তৃতীয়াংশের রোড পারমিট না থাকলেও মহাসড়কে অবাধে চলাচল করছে। ফলে প্রতিনিয়তই গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কে ঘটছে ছোট বড় অসংখ্য দুর্ঘটনা। 

অভিযোগ রয়েছে, সড়ক শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছে এসব যানবাহন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা আরিচা মহাসড়কে গাবতলি, সায়েদাবাদ ও গুলিস্থান থেকে বিভিন্ন নামে মানিকগঞ্জ ও পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল করে। এর মধ্যে গাবতলি থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত সেলফি পরিবহনের ২১৬ টি, দ্রুতগতি পদ্মা পরিবহনের ৩২ টি ও যাত্রীসেবা পরিবহনের ৩০ টি বাস রয়েছে। 

চিটাগাং রোড় থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত নীলাচল পরিবহনের ৭০টি, গুলিস্থান থেকে মানিকগঞ্জ ও পাটুরিয়া পর্যন্ত শুভযাত্রা পরিবহনের ৬০টি এবং লিং পরিবহনের ১২টি এসি বাস চলাচল করে। এছাড়া পাটুরিয়া থেকে নবীনগর পর্যন্ত চলাচল করে উনিশে পরিবহনের ১৫টি বাস। মানিকগঞ্জের অভ্যন্তরীন রুটে চলাচল করছে স্বপ্ন পরিবহনের ২০০টি বাস।

মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়ানো এসব পরিবহনের মধ্যে সেলফি পরিবহনের রোড পারমিট রয়েছে ৬০টি, নীলাচল পরিবহনের ৭০টি, শুভযাত্রার ৬০টি। 

এরপরও রোড পারমিট ছাড়াই সেলফি পরিবহনের দেড়শোর বেশি, পদ্মা পরিবহনের ৪০টি, উনিশে পরিবহনের ১৫টি ও স্বপ্ন পরিবহনের ২০০টি বাস সড়কে যাতায়াত করছে। 

কাজী ফারুক নামের এক যাত্রী বলেন, ‘ঢাকা আরিচা মহাসড়কে আতঙ্কের নাম সেলফি পরিবহন। মহাসড়কে শতকরা ৭০টি দুর্ঘটনার হচ্ছে সেলফি পরিবহনের। তিনি শুনেছেন সেলফি পরিবহন যে কয়টি রোডপারমিট পেয়েছে তার তিনগুন বেশি বাস সড়কে চালাচ্ছে। সড়ক শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা কর্তা ব্যক্তিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে রোড পারমিট ছাড়া কোনো গাড়ি মহাসড়কে চলতে পারতো না।  শুধু সেলফি পরিবহন নয় যাদের রোডপারমিট নেই সেই সব যানবাহন ডাম্পিং করা প্রয়োজন।’

বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে সব যাত্রীবাহী যানবাহনের রোড পারমিট নেই তারা মালিক সমিতি, শ্রমিক সমিতি , হাইওয়ে থানা ও ট্রাফিক পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে অবৈধ যানকে বৈধ করে নিচ্ছে। তারপরেও বিভিন্ন সময় অভিযানে রোড পারমিট ও ফিটনেস না থাকায় মামলার স্বীকার হতে হয়। জরিমানার টাকা দিয়ে এসব যানবাহনগুলোকে বৈধ করা হয়। 

নীলাচল পরিবহনের মানিকগঞ্জ ইনচার্জ চন্ডি চক্রবর্তী বলেন, ‘চিটাগাং রোড থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত আমাদের ৭০টি গাড়ির রোডপারমিট রয়েছে। বর্তমানে গড়ে ৬০টি গাড়ি চলাচল করছে।’

দ্রুতগতির পদ্মা পরিবহনের মানিকগঞ্জ চেকিংম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নবীনবরণ গাড়িগুলো আধুনিক করে দ্রুতগতির পদ্মা পরিবহনের নাম করণ করা হয়েছে। বর্তমানে এ রুটে ৩২টি গাড়ি চলাচল করছে। বাসগুলোর রোডপারমিট আছে কি না তা আমার জানা নেই।’ 

সেলফি পরিবহনের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন জানান, বর্তমানে তাদের ২১৬টি গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে গড়ে চলাচল করে ১৭০টি। গাবতলি থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত ৬৫টি গাড়ির রোডপারমিট রয়েছে। ঢাকা আঞ্চলিক আরডিসির আগামী সভায় বাকি গাড়িগুলোর রোডপারমিট হয়ে যাবে। প্রতি ৫মিনিট পরপর গাড়িগুলো ছেড়ে যায়। দুর্ঘটনা রোধে চালকদের সর্তক করা হয়েছে। ইচ্ছা করে কোনো চালাক দুর্ঘটনা ঘটনায় না।

মানিকগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে যেসব পরিবহনে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে তাদের অধিকাংশরই রোড পারমিট নেই। বিশেষ করে মহাসড়কে মাঝে মধ্যেই সেলফি পরিবহনের সড়ক দুর্ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে। প্রশাসনের কাছে রোডপারমিট ও ফিটনেস বিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন তিনি। 

মানিকগঞ্জ বিআরটিএ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা- আরিচা মহাসড়কে কতগুলো যাত্রীবাহী বাসের রোড পারমিট নেই তার নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। ঢাকা আরডিসি কমিটির অনুমোদন নিয়ে সেলফি পরিবহনের ৬০টি যাত্রীবাহী বাস গাবতলি থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি রয়েছে। নীলাচল পরিবহন চিটাগাং রোড থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত ৭০টি যাত্রীবাহী বাস চলাচল করার অনুমতি রয়েছে। শুভযাত্রা পরিবহনের কিছু যাত্রীবাহী বাসের অনুমতি থাকলেও অন্যসব পরিবহনের রোড পারমিট নেই। এছাড়া যেসব গাড়ির রোড পারমিট আছে তাদের কোনো কাগজ দপ্তরে নেই। গাড়ি নম্বর দিয়ে সার্চ দিয়ে জানা যায় রোড পারমিট আছে কি না।’ 

বরংগাইল হাইওয়ের ওসি মো. জাকির হোসেন ও মানিকগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক কে এম মিরাজ বলেন, তাদের অভিযান পরিচালনার সময় যদি কোনো যানবাহনের রোড পারমিট না থাকে তবে সেই গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘রোড পারমিট ছাড়া যাত্রীবাহী গাড়ি রাস্তায় চলাচলের কথা নয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে রোড পারমিটবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়