অনাবৃষ্টিতে মেহেরপুরে কৃষক আমন চাষ নিয়ে বিপাকে
মেহেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
শুকিয়ে গেছে মেহেরপুরে মাঠ
চলতি মৌসুমে মেহেরপুরে অনাবৃষ্টি আর খরার কারণে রোপা আমন আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার চাষিরা। টানা রৌদ্র তাপে মাঠে লাগনো আমন ধানের চারা হলুদ রং ধারণ করেছে। কৃষকরা ফসল ভালো রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই তীব্র খরায় পুড়েছে আমনের বীজতলা। আমন চাষের ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অনাবাদী হয়ে পড়ে আছে অনেক জমি।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় ২৬ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এখনও সময় আছে। চারা নিয়ে অনেকেই অপেক্ষামাণ আছে। এর মধ্যে বৃষ্টিপাত হলে কৃষকরা ধান লাগাতে শুরু করবে।
মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের কৃষক হবিবুর রহমান হবু বলেন, এখন বর্ষাকাল তারপরও দীর্ঘদিন বৃষ্টির দেখা মেলেনি। অনাবৃষ্টি আর তীব্র খরতাপে ব্যাহত হচ্ছে সব ধরনের ফসলের চাষ।
তিনি আরো বলেন, কৃষকরা সেচ পাম্প মালিকের সঙ্গে মৌসুম চুক্তি করেও সেচ দিচ্ছেন। এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে এ বছর কৃষকদের সেচ খরচ বাবদ অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ৬/৭ হাজার টাকা।
একই গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, ‘এ বছর আমি ২ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছি। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ৩ দিন পরপর সেচ দিতে হচ্ছে। একদিকে সার, বিষ ও ডিজেলের দাম বেড়েছে। তার উপর অতিরিক্ত সেচ খরচ দিতে গিয়ে কৃষকরা এবার মাঠেই মারা যাবে।’
মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের কৃষক মইনুল ইসলাম বলেন, ‘খরার কবলে পড়েছে বৃষ্টিনির্ভর রোপা আমন। অন্যান্য বছর এ জেলায় আমন ধান চাষের ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। কোনো ধরণের সেচ দিতে হয় না। কিন্তু এ বছর বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির মুখ দেখা যায়নি। আমি আট বিঘা জমিতে রোপা আমনের চাষ করেছি। বৃষ্টি না হওয়ায় এ সব জমিতে সপ্তাহে দুই দিন সেচ দিতে হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, বর্ষা মৌসুমে চৈত্র ধান চাষের মতো খরচ হচ্ছে কৃষকদের।
গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের সফিকুল বলেন, ‘প্রতি বছর আমি ৪/৫ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করে থাকি। এ বছর অনাবৃষ্টি আর খরার কারণে ভালো চারা পাইনি। রোদে শুকিয়ে গেছে বীজতলা। তাই রোপা অমন করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।’
একই উপজেলার ধানখোলা গ্রামের আরজান হোসেন বলেন, ‘এ বছর ৭/৮ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করি। এবার বৃষ্টিপাত না হওয়ায় রোপনকৃত ক্ষেতের চারা রসের অভাবে মারা যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বর্ষা ঋতুর প্রথম মাস আষাঢ় চলে গেছে। শ্রাবণ মাসের প্রথম ১০ দিন চলে গেছে তবুও বৃষ্টির দেখা নেই। কীভাবে ধান হবে?’
চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল হক বলেন, শ্রাবণ মাসের প্রথম ১০ দিন তাপমাত্রা ৩৩-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠানামা করছে।
তিনি আরো বলেন, মেহেরপুর জেলায় এ বছর বর্ষা মৌসুমের আষাঢ়ে অঝোর ধারার বৃষ্টিপাত হয়নি। তার ওপর বেশকিছু দিন ধরে এ অঞ্চলে খরা বিরাজ করছে। তাপমাত্রা ওঠানামা করায় তাপপ্রবাহে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থা আরও দু-একদিন বিরাজ করতে পারে। এ অঞ্চলে অল্প পরিমাণ বৃষ্টির দেখা মিললেও তাপপ্রবাহ আপাতত কমবে না বলে জানালেন তিনি।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সামছুল আলম বলেন, ‘রোপা আমন চাষ বৃষ্টিনির্ভর ফসল। ১৫ জুলাই পর্যন্ত রোপা আমন চাষের ভরা মৌসুম ছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। তার উপর বেশ কিছুদিন ধরে খরায় পুড়ছে আমনের বীজতলা। এ পরিস্থিতিতে সম্পূরক সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি কৃষকদের।’
মহাসিন/বকুল
আরো পড়ুন