ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটিতে হত্যা মামলার আসামি, নেতাদের ক্ষোভ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৪, ২ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৪:১৪, ২ আগস্ট ২০২২
যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটিতে হত্যা মামলার আসামি, নেতাদের ক্ষোভ 

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন তানভীর ফয়সাল। তিনি ছাত্রলীগ কর্মী নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের মশিয়ূর রহমান হলে ডাকাতির মামলারও এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। এদিকে একই মামলার আসামি আল মামুন সিমনও পেয়েছেন সহ সভাপতির পদ।

হত্যার মামলার আসামি ফয়সাল ও হল ডাকাতি মামলার আসামি সিমনকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ায় সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, বিতর্কিত ছাত্রদের পদ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। 

রোববার (৩১ জুলাই) রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল-নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আগামী এক বছরের জন্য যবিপ্রবি ছাত্রলীগের ১১ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সোহেল রানাকে সভাপতি ও তানভীর ফয়সালকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। যবিপ্রবি ছাত্রলীগের আগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার প্রায় আড়াই বছর পর নতুন এই কমিটি দেওয়া হয়েছে।

যবিপ্রবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন- আফিকুর রহমান অয়ন, নাজমুস সাকিব, মেহেদী হাসান ও আল মামুন সিমন।  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেন- কামরুল হাসান শিহাব, এস এম ইকরামুল কবির দ্বীপ ও নূর মোহাম্মদ টনি। সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন মনিরুল ইসলাম হৃদয় ও মুরাদ পারভেজ।

পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতারা জানান, ১১ জনের অংশিক কমিটিতে জায়গা পাওয়াদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত। 

সংশ্রিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই দুপুরের দিকে যবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রিয়াদ ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে হত্যার শিকার হন। পরবর্তীতে নিহত রিয়াদের পরিবার মামলা করলে প্রথমে থানা পুলিশ পরে সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে। মামলার তদন্ত শেষে আসামিদের দেওয়া তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্যে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকায় ১১জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ১১ জনের আসামির তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছেন তানভীর ফয়সাল। বর্তমানে এই মামলায় ফয়সাল জামিনে রয়েছেন। 

২০১৭ সালের ৫ অক্টোবরে যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানের নেতৃত্বে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সে সময় শিক্ষার্থীদের প্রায় ৩০০ ফোন, ১০০ ল্যাপটপ, নগদ অর্থ লুট হয়। ঘটনার তিনদিন পর ৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস ২৫ জনের নামে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় ১১ নাম্বার আসামি করা হয় তানভীর ফয়সালকে। একই মামলার ১০ নম্বর আসামি করা হয় আল মামুন সিমনকে।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে টানা ৫ বছর ধরে পড়াশুনা করছেন ফয়সাল। 

অভিযোগের বিষয়ে তানভীর ফয়সাল বলেন, ‘আমি হত্যা ও ডাকাতির মামলায় বর্তমানে জামিনে রয়েছি। তাছাড়া আমি তো এখনো আদালতে দোষী প্রমাণিত হয়নি। রাজনৈতিকভাবেই ওই মামলাগুলোতে আমার নামে জড়ানো হয়েছে। কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছে তারা সবাই ছাত্র ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী। সুন্দর একটি কমিটি হয়েছে। যারা কমিটিতে স্থান পায়নি তারা বিভিন্ন অপপ্রচার করে যাচ্ছে।‘ 

তিনি আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশে কয়েক দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে। সেখানে ত্যাগী এবং বাদ পড়া ছাত্রলীগ কর্মীরা স্থান পাবেন।’

এই বিষয়ে সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতি করি। তার ফল হিসেবেই কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে মূল্যায়ন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি হয়নি ফলে এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। ক্যাম্পাসে অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে ভালো পদ পাওয়ার যোগ্যতা তাদের রয়েছে। ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতা কর্মীদের ছাত্রলীগে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’ 

কমিটিতে হত্যা ও ডাকাতির মামালার আসামি রয়েছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। 

প্রঙ্গগত, ২০১৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সুব্রত বিশ্বাসকে সভাপতি ও এসএম শামীম হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছর মেয়াদী যবিপ্রবি ছাত্রলীগের ৫৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। 

রিটন/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়