ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

১০ গ্রামের ভরসা সাঁকো

মেহেদী হাসান শিয়াম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ৩ আগস্ট ২০২২  
১০ গ্রামের ভরসা সাঁকো

ছবি: রাইজিংবিডি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের পাগলা নদী পারাপারের জন্য রয়েছে একটি মাত্র বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকো পার হয়ে তিন ইউনিয়নের দশ গ্রামের বাসিন্দারা যাতায়েত করে থাকেন। তাই এই নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

যেস্থানে সাঁকোটির অবস্থান সেটি উমরপুর ঘাট নামে পরিচিত। স্থানীয়দের দাবি, ঘাটটি চালু হওয়ার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো সরকার কোনো কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি। ফলে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ গন্তব্যে পৌঁছাতে এই একটি মাত্র সাঁকোর ওপরই নির্ভরশীল। ফলে প্রতিনিয়ত তাদের নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাগলা নদীর আশপাশে তিন ইউনিয়নের প্রায় ১০ টি গ্রাম আছে। আর এসব গ্রামে বসবাস করেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, পোষ্ট অফিসসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে এসব গ্রামে। ঘাটের দুই পাশে কাঁচা রাস্তার সংযোগ থাকলেও নেই কোনো সেতু।

আশরাফ নামের স্থানীয় এক বীর ‍মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘বৃটিশ আমলের এ উমরপুর ঘাট। এই ঘাটে কার্লভার্ট বা সেতু নির্মাণ হবে বলে বিভিন্ন সময় সরকারি কর্মকর্তা, আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু গত ৫২ বছরেও তাদের সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ নেয়নি।’

বাঁশের সাঁকোর একপারে কানসাট আম বাজার। নদীর উপর কালভার্ট না থাকায় ব্যাটারি কিংবা ইঞ্জিন চালিত কোন গাড়ি চলাচল সেরকম ভাবে করে না। ফলে বাই সাইকেলে করে আমের বোঝা নিয়ে বাজারে যেতে হয় আম চাষিদের।

সাইকেলে আম বোঝাই করে সাঁকো পার হচ্ছিলেন বাদল নামে এক আম চাষি। তিনি বলেন, ‘এই সাঁকোটি যানবাহন চলাচলের অনুপযাগী। তাই সাইকেলে বড় ডালিতে (ঝুড়ি) করে আম নিয়ে কানসাটে যাচ্ছি। ভ্যান কিংবা অটো থাকলে খুব কম সময়ে আম নিয়ে বাজারে পৌঁছে যেতাম। মালামাল নিয়ে এ সাঁকো পার হতে ভয় লাগলেও উপায় নেই।’

তিনি আরো বলেন, পাগলা নদীতে যখন পানি কম থাকে তখন বাঁশের সাঁকোই ভরসা। নদীতে পানি বাড়লে নৌকায় যাতায়াত করতে হয়।’

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শামির বলেন, ‘নদীতে পানি বেশি থাকলে নৌকায় নদী পার হতে হয়। নৌকার নদীর ওপাড় থেকে এ পাড়ে আসতেও সময় লাগে। ফলে ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তিনি এসে আমাদের পার করতে করতে স্কুলের যেতে দেরি হয়ে যায়। তখন ক্লাস টিচার বকা দেন।’

হাজী মমতার উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ফারুর হোসেন বলেন, ‘নদীতে পানি বেশি থাকলে বাঁশের সাঁকো আর থাকে না ডুবে যায়। সে সময়ে মানুষ নৌকায় নদী পর হয়।সাঁকোর উপর দিয়ে অনেক শিশু শিক্ষার্থী যাতায়াত করেন।হতাহতের ঘটনা ঘটার শঙ্কা থাকে। আমাদের এ ঘাট দিয়ে কালভার্ট বা সেতু নির্মাণ হলে অনেক উপকার হবে। মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। কম সময়ে শাক-সবজি গাড়ি পার হতে পারবে। এ এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে সেতুটি ভূমিকা রাখতে পারবে।’ 

শ্যামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, ‘উমরপুর ঘাটের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে শ্যামপুর, বিনোদপুর ও কানসাট ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। নদীর দুই পাড়ে অনেকের আবাদি জমি, আম বাগান আছে। সাকোঁর উপর ‍দিয়ে উৎপাদিত ফসল নিয়ে যেতে কৃষকদের খুব কষ্ট হয়।এছাড়াও মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তিতো আছেই। আমরা বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানিয়েছি।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা.সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, ‘আমি উমরপুর ঘাটের বাঁশ দিয়ে নির্মিত  সাঁকোর কথা শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে সংশিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছি। ইতোমধ্যে এ ঘাটে কালভার্ট নির্মাণের জন্য প্রকল্প পাশের অনুমদোন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। প্রকল্পটির অনুমদোন হলে কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়