ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, শুরু হয়েছে ভাঙন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ৪ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৩:০০, ৪ আগস্ট ২০২২
কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, শুরু হয়েছে ভাঙন

কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

কুড়িগ্রামের প্রতিটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এতে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকাগুলোতে ভাঙন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে গত এক সপ্তাহে ঘর-বাড়ি হারিয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক নিম্নাঞ্চলে ঢুকে পড়েছে নদ-নদীর পানি। এতে ঘর-বাড়ি হারানো পরিবারগুলো অতি কষ্টে দিন যাপন করছেন। এছাড়া নির্ঘুম রাত কাটছে ভাঙনের হুমকিতে থাকা পরিবারগুলোর।

ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষরা জানান, নদীতে পানি বাড়লে ও কমলে ভাঙন বেড়ে যায়। বছরের পর বছর ধরে চলা নদী ভাঙন থেকে তাই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থরা।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়া পাড়া এবং উলিপুর উপজেলার বেগমগন্জ ইউনিয়নের নয়ারহাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত এক সপ্তাহে এসব এলাকার অন্তুত ২০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। 

বানিয়া পাড়া গ্রামের মোমেনা বেগম বলেন, ‘বারবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করলেও সরকার আমাদের দিকে তাকায় না।’ 

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ‘ভাঙন অব্যাহত থাকায় চর যাত্রাপুর বেড়িবাঁধ ও যাত্রাপুর বাজার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা।’ 

ধরলা নদীর ভাঙনে গত কয়েকদিনে সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নের সিতাইঝাড় গ্রামের ৩৫ পরিবার বসতভিটা ও আবাদী জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

সিতাইঝাড় এলাকার মজিবর বলেন, ‘এই চরের ৩৫টি পরিবারের ঘর-বাড়িসহ অবাদি জমি সব নদীতে চলে গেছে। ভাঙন অব্যাহত আছে। যাদের ঘর বাড়ি নদী ভেঙেছে তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। কয়েক দফা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এই চরে আশ্রয় নিয়েছিলাম আমি।’ 

এদিকে তিস্তার ভাঙ্গন প্রবল হয়ে উঠছে। নদীর দুই পাড় জুড়ে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় এক সপ্তাহে প্রায় শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। 

রাজারহাট উপজেলার তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘তিস্তার দুই পাড়ের ভাঙন কবলিত যেসব এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছ সেসব এলাকায় ভাঙন কম হলেও নতুন নতুন এলাকা ভাঙনের কবলে পড়ছে।’

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের স্থায়ী ভাঙন রোধে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। তিস্তা নিয়ে সরকারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলমান। এ কারণে তিস্তার স্থায়ী ভাঙন রোধে কোনো প্রকল্প চলমান নেই। তবে এমারজেন্সি ওয়ার্কের আওতায় ভাঙন কবলিত জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘উজানের পানিতে জেলার নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন কবলিত ওইসব এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে। বাকি এলাকাগুলোতেও ভাঙন রোধে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’ তিস্তার মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

বাদশাহ সৈকত/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়