ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ক্লাসে ফ্যানের আঘাতে চোখ গেল শিক্ষিকার, খোঁজ নেয়নি কেউ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৮, ৫ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ২১:৩৭, ৫ আগস্ট ২০২২
ক্লাসে ফ্যানের আঘাতে চোখ গেল শিক্ষিকার, খোঁজ নেয়নি কেউ

শিরিনা আকতার

স্কুলে ক্লাস চলাকালীন সময় ফ্যান ছিঁড়ে পড়ে চোখ নষ্ট হওয়া শিক্ষক শিরিনা আকতার চারদিন ধরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার খোঁজ নেয়নি শিক্ষা প্রশাসন বা উপজেলা প্রশাসনের কোনও কর্মকর্তা।

বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে শিক্ষিকার চোখের ব্যান্ডেজ খুলে দেয়া হয়েছে। তবে এখনো তাকে জানানো হয়নি, তার ডান চোখ একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। সে কারণে শিরিনা আকতার যাকেই পাচ্ছেন আকুতি জানাচ্ছেন, দোয়া করবেন আমার চোখ যেন ভাল হয়ে যায়।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জানান, দুর্বলভাবে ফ্যানটি বাধায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে স্কুলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা রক্ষা পেলেও শিক্ষিকা শিরিনা আকতার চোখ হারিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় পড়ে আছেন।

সহকারী শিক্ষক মিলনী রানী রায় বলেন, ‘ওই দিন দুপুরে দুইজন একসঙ্গে খাওয়া শেষ করি। পরে শিরিনা আকতার চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস নিতে যান। কিছুক্ষণের মধ্যে তার চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে দেখি, ফ্যান ছিঁড়ে পড়ে তার চোখ রক্তাক্ত।’

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রাক্তন শিক্ষক রাজেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ‘দুর্বল পাতলা বাঁশের সঙ্গে ফ্যানটি বাঁধা ছিল। চলার সময় বাঁধন খুলে পড়ে গেছে। এটা নিছক দুর্ঘটনা’

গোড়াই দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিমা ইয়াসমিন সাথি বলেন, ‘স্কুলটি একেবারে ভাঙার দশা ছিল। ২০০০-২১ অর্থবছরে ক্ষুদ্র মেরামতের জন‌্য দেড় লাখ টাকা ও ২০২১-২২ অর্থবছরের স্লিপের ৫০ হাজার টাকা দিয়ে স্কুলের মাটি কেটে ঘর পুনরায় নির্মাণ করা হয়।’

ফ্যান ছিঁড়ে পড়ে যাবার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। আক্ষেপ করে বলেন, ‘একজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন অবস্থায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে পরলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন থেকে কেউ তার খোঁজ নেয়নি। বাড়িয়ে দেয়নি সহায়তার হাত। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

শিক্ষিকা শিরিনা আকতারকে ফোন করলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকির মতো কিছু একটা অনুভব করছি। চোখটি ভালো হবে তো? আমি সকলের কাছে দোয়া চাই।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক একটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন পাইনি। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল কুমার বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে খোঁজ খবর নিতে বলা হয়েছে। তারা নিয়েছে কি-না জানা নেই। আমি জেনে জানাব।’

সৈকত/কেআই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়