পর্যটকদের জন্য ‘ফকির মুরং’ ঝর্ণা হতে পারে দর্শনীয় স্থান
বিজয় ধর, রাঙামাটি || রাইজিংবিডি.কম
‘ফকির মুরং’ ঝর্ণার পানিতে গোসল করছেন কিছু পর্যটক
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই জেগে ওঠে পাহাড়ের খাদে লুকিয়ে থাকা ঝর্ণাগুলো। বর্ষার শুরুতেই এসব ঝর্ণা দেখতে ভিড় করেন পর্যটকরা। তেমনই একটি ঝর্ণা হলো রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ‘ফকির মুরং।’ এই ঝর্ণাটি খুব সহজেই পর্যটকদের জন্য হয়ে উঠতে পারে একটি দর্শনীয় স্থান। প্রকৃতি প্রেমীরা ঘুরে আসতে পারেন অপরুপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে এই ‘ফকির মুরং’ ঝর্ণা থেকে।
ঝর্ণাটি দেখে আসা রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান বলেন, ‘ফকির মুরং ঝর্ণাটি অসাধারণ। এখানে না আসলে বোঝা যাবে না প্রকৃতি নিজেকে এতো সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়েছে।’
ফকির মুরং ঝর্ণাটির অবস্থান কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ইউনিয়নে। রাঙামাটি-ঘাগড়া বড়ইছড়ি সড়কের বটতলী এলাকার পূর্ব পাশের রাস্তা দিয়ে ভাইয্যাাতলি এলাকা পার হয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার পাহাড়ি ঝিরি পার হয়ে এই ঝর্ণায় যেতে হয়।
ঝর্ণায় ঘুরতে আসা উন্নয়নকর্মী নুকু চাকমা বলেন, ‘রাঙামাটি শহরের খুব কাছের এই ঝর্ণা যে কোনো পর্যটকের জন্যই আর্কষণের কেন্দ্রবিন্দু। রাঙামাটি কাপ্তাই রোডে বটতলী থেকে হেঁটে যেতে হয় ঝর্ণাটিতে।’
ফকির মুরং ঝর্ণা দেখতে আসা চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং বলেন, ‘এই ঝর্ণায় আসার পথে পাথরের যে সমারোহ দেখলাম তা মুগ্ধ করেছে। পাশাপাশি দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এই ঝর্ণা দেখতে এসে আমার খুবই ভালো লাগছে।’
এই এলাকায় ছোট বড় কয়েকটি ঝর্ণা রয়েছে। স্থানীয়রা এটিকে ‘ফইরা মুরং’ ঝর্ণা বলে ডাকেন। ঝর্ণাটির স্থানে যেতে কিছুটা রোমঞ্চকর অনুভূতি উপলদ্ধি হয়। বন আর পাহাড়ের মাঝখানে ঝর্ণাটির অবস্থান হওয়ায় পাখির কিচির মিচির কলরব এক স্বর্গীয় অনুভূতি দেয়। ঝর্ণাটির পথিমধ্যে রয়েছে অনেকগুলো তঞ্চঙ্গ্যা পরিবারের নিবাস। যেখানে তাদের দৈনন্দিন জীবনধারাও চোখে পড়ে।
পাগলী পাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা চিত্তসেন কার্বারী বলেন, ‘ছোটবেলায় দাদুর মুখে শুনেছি এখানে শত বছর আগে একজন সাধক ধ্যান করতেন। স্থানীয় লোকজনের মন কামনা পূরন হওয়ার জন্য মানত করতো। এইখানে ফকির ধ্যান করত বলে এটির নাম রাখা হয় ‘ফকির মুরং কুয়া’।
কাপ্তাই উপজেলার ৫ নম্বর ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তপন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘এই ঝর্ণাটি খুবই সুন্দর। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই ঝর্ণাটি জীবিত হয়ে ওঠে। তবে এখনো ঝর্ণায় আসার রাস্তাগুলো অনুন্নত। তাই প্রশাসনের কাছে আবেদন থাকবে রাস্তাগুলো যাতে উন্নত করা হয়।’
ওয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান অরুন তালুকদার বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসছে। তবে পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। যদি এই এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা যায়, তাহলে প্রচুর পর্যটকের আসতে শুরু করবেন।’
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনতাসির জাহান বলেন, ‘পাহাড় এবং ঝর্ণা পরিবেষ্টিত এই কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের পড়তে পড়তে রয়েছে অপার সৌন্দর্য এবং সম্ভাবনা। আজকে আমি প্রথমবারের মতো এই ঝর্ণা দেখতে আসলাম এবং এর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হলাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে অক্ষুন্ন রেখে পর্যটকরা যাতে খুব সহজেই এই ঝর্ণা দেখতে আসতে পারেন তার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে কিভাবে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানো যায় তার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’
মাসুদ
আরো পড়ুন