ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণ: দুই আসামির সম্পৃক্ততা নিয়ে তদন্ত চলছে

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৫, ১৬ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৫:০২, ১৬ আগস্ট ২০২২
বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণ: দুই আসামির সম্পৃক্ততা নিয়ে তদন্ত চলছে

টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনায় অংশ নেওয়া ১১ আসামি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিন ধাপে তারা আদালতে জবানবন্দি দেন। এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত অপর দুই আসামির সম্পৃক্তার বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। 

এদিকে ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মাহমুদুল হাসান ওরফে মুন্না ওরফে রতন কিশোর বয়সেই অপরাধে জড়িয়ে পরে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গত ৩ আগস্ট ভোরে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালুর ঢিবির কাছে বাসের গতি থামিয়ে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে বাসের যাত্রী হেকমত আলী বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা করেন। মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশে হস্তান্তরের পর বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজা মিয়াকে ও শুক্রবার (৫ আগস্ট) কালিয়াকৈর ও মৌচাক এলাকা থেকে মো. আওয়াল ও নুরনবীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পর দিন শনিবার (৬ আগস্ট) তিন জনই আদালতের নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ১০ জনকে রোববার (৭ আগস্ট) রাতে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে সোমবার (৮ আগস্ট) রাতে ডিবি পুলিশের কাছে র‌্যাব গ্রেপ্তারকৃতদের হন্তান্তর করে। গত ৯ আগস্ট গ্রেপ্তারকৃত আদালতে পাঠালে আসলাম তালুকদার (১৯), রাসেল তালুকদার (২৫), নাইম সরকার (১৯) ও আলাউদ্দিন (২৪) আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। 

অপর আসামি মাহমুদুল হাসান ওরফে মুন্না ওরফে রতন (২২), আব্দুল মান্নান (২০), বাবু হোসেন ওরফে জুলহাস (২১), মো. সোহাগ (১৯), জীবন প্রামানিক (২০) ও খন্দকার হাসমত আলী ওরফে দীপুকে (২৩) গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করে। সে সময় আদালতের বিচারক ফারজানা হাসানাত প্রত্যেককে তিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

গত ১০ আগস্ট (বুধবার) বাবু হোসেন (২১) এবং সোহাগ মন্ডল (২০) এবং ১১ আগস্ট মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেন (২১) এবং আব্দুল মান্নান (২২) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। রিমান্ড শেষে খন্দকার মো. হাসমত আলী ওরফে দীপু এবং মো. জীবনকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

তবে দীপু ও জীবন এ ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলো কিনা না সে বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, বাসের নারী যাত্রীকে রাজা মিয়া দুইবার এবং রতন, আওয়াল, নুরনবী ও মান্নান একবার করে ধর্ষণ করেছেন। আসামি রতন তার স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সন্দেহে দুই জনের দীপু ও জীবনের নাম বলেছে। সেটি খতিয়ে দেখা দেখা হচ্ছে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উত্তর) ও বাস ডাকাতি ও ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন জানান, বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ১১ জন আসামি নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত আরও দুই আসামীর সম্পৃক্ততা নিয়ে তদন্ত চলছে।

প্রসঙ্গত, গত ২ আগস্ট কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাস নারায়নগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বাসটি রাত সাড়ে ১১টায় সিরাজগঞ্জে একটি খাবার হোটেলে যাত্রা বিরতি করে। সেখান থেকে ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই তিন দলে বিভক্ত হয়ে ১০/১২জনের যাত্রীবেশি ডাকাতরা বাসটিতে ওঠেন। বাসটি টাঙ্গাইলে করটিয়া পার হওয়ার পর অস্ত্রের মুখে ডাকাতরা বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলেন। তারা যাত্রীদের মুঠোফোন, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। এসময় বাসে এক নারী যাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। 

ডাকাতি চলাকালেই বাসটি মির্জাপুরের গোড়াই থেকে ঘুরে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের দিকে যেতে থাকে। ভোর সাড়ে ৩টার দিকে মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে বাসটি খাদে পড়ে যায়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যাত্রীদের উদ্ধার করে।

কাওসার/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়