ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জরাজীর্ণ হোস্টেলে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের বসবাস 

মাদারীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫২, ২৪ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৪:২৩, ২৪ আগস্ট ২০২২
জরাজীর্ণ হোস্টেলে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের বসবাস 

মাদারীপুর সরকারি কলেজের ঝুঁকিপূর্ণ ছাত্রাবাস

চার তলা ভবনের ছাত্রাবাসের অধিকাংশ জায়গায় বড় বড় ফাটল। ছাদ ও ভিমের পলেস্তরা খুলে বের হয়ে আছে রড। বাথরুমের পাইপ বেয়ে পড়ছে নোংড়া পানি। এরইমধ্যে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায়, বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। 

এমনই বেহাল দশা মাদারীপুর সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসের। 

কলেজ সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর সরকারি কলেজের চারতলা ছাত্রবাসটি ২৪ কক্ষ বিশিষ্ট। এখানে থাকা আবাসিক ছাত্রের সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। 

১৯৮৫ সালে নির্মিত হয় ভবনটি। ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর সারা দেশের জরাজীর্ণ ভবন চিহ্নিত করা হয়। সেই সময় এই ভবনটি এলজিইডির মাধ্যমে মৌখিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সরকার। পরে ভবনটি মেরামতের মাধ্যমে আরো কিছুদিন ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়।

 

চলতি বছরের মে মাসে ছাত্রবাসটির নতুন হোস্টেল সুপার সাইদুর রহমান খান দায়িত্ব নেওয়ার পরে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জামান মিয়ার মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে ভবনটি সংস্কার ও বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান মাদারীপুরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে। হোস্টেল সুপারের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে, মাদারীপুরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী সুব্রত রায় ভবনটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে ২৬ মে ভবনটিকে মেরামত অযোগ্যের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে মাদারীপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। পরে সতর্কতা বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে ছাত্রাবাসটিতে আবাসিক ছাত্রদের সংখ্যা ও চলাচল সীমিত করার জন্য বলা হয়। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ভবনটির বেশ কয়েকটি জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল। নিচ তলায় ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের দেওয়ালে ঝুলানো লাল ব্যানারে লেখা সতর্কবার্তা। তাতে লেখা আছে, মাদারীপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে এই ছাত্রাবাসটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসিক ছাত্রদের ছাত্রাবাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন ও চলাচল সীমিতকরণ করতে বলা হলো। ভবনটির পূর্ব পাশের চারটি তলার বাথরুমের ছাদ ভেজা ও স্যাতস্যাতে থাকায় উপর থেকে পড়ছে ময়লা পানি। 

এদিকে ভবনের চাপে বেলকুনির গ্রিলগুলো বাঁকা হয়ে গেছে। অপরদিকে ৩ তলার ৩১৯ নাম্বার রুমের কোনার একটি অংশের ছাদ ভেঙে বের হয়ে আছে রড। ৪ তলায় গিয়ে দেখা যায় পূর্ব ও পশ্চিম পাশের ৩ টি পিলারের ঢালাই খুলে রড বের হয়ে আছে। 

ছাত্ররা জানান, এখানে বসবাসকারী অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এসেছে দূরের জেলা থেকে। বাইরের মেসগুলোতে খরচ বেশি। এই খরচ বাঁচাতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। ভবনটির প্রতিটি রুমের অবস্থাই বেহাল। 

এদিকে ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, সব সময় ছাত্রাবাসের সামনে আড্ডা চলে বহিরাগতের। প্রকাশ্যে দিনের আলোতেই ছাত্রাবাসের সামনে বসে মাদক সেবন করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এরা স্থানীয় হওয়ায় কেউ তাদের কিছু বলতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের দাবি, অতিদ্রুত প্রশাসনিক তৎপরতা ও নতুন ভবন তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জীবন নিরাপদ করা হোক। 

ভবনটির এক আবাসিক শিক্ষার্থী রোমান মোল্লা বলেন, ‘আমাদের এ ভবনটি এখন বাসের অযোগ্য। পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ থেকে শুরু করে অধিকাংশ জেলার শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করতে আসেন। সরকার থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পরেও নতুন ভবন না থাকার বাধ্য হয়েই আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি একটি নতুন ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা করা হোক।’ 

ছাত্রাবাসের আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী মো. হাসান বলেন, চার মাসে আগেই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। নতুন একটি ছাত্রাবাসের অভাবে এখানে আমরা প্রায় ২০০ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছি। তাছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। বাহিরে অনেক খরচ, এতো খরচ আমাদের কারো পক্ষে বহন করা সম্ভব না।’

মাদারীপুর সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসের হোস্টেল সুপার সাইদুর রহমান খান বলেন, ‘এখানে বসবাসকারী ছাত্রদের অধিকাংশই দরিদ্র। যার ফলে পারিপার্শ্বিক দৈন্যতা ও আর্থিক সমস্যার কারণে তাদের বলা হলেও তারা এখনো হল ত্যাগ করছে না। আমি শুনেছি শিগগিরি মাদারীপুর সরকারি কলেজে একটি নতুন ছাত্রাবাস হবে।’ 

মাদারীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জামান মিয়া বলেন, ‘আমাদের মাদারীপুর সরকারি কলেজে একটি নতুন ছাত্রাবাস অতি জরুরি। আমাদের ছাত্ররা পুরাতন ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন। আমরা ১০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি ছাত্রাবাসের তৈরির দাবিতে শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন।’  

মাদারীপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর ইসলাম বলেন, ‘কলেজটির ছাত্রাবাসের চারতলা ভিত বিশিষ্ট একটি ১০০ শয্যা হোস্টেল ভবনের প্রাক্কলন প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দরপত্র আহ্বান করা হবে।’ 

বেলাল রিজভী/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়