‘প্রধানমন্ত্রী বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দিলেই আমরা কাজে ফিরবো’
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
সুনশান নীরবতা বিরাজ করছে মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতে
৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে গত ১২ দিন ধরে ধর্মঘট পালন করছেন মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা। তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী সরাসরি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে ন্যায্য মজুরির বিষয়ে ঘোষণা না দেওয়ার আগ পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন তারা।
বুধবার (২৪ আগস্ট) সকালে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া, ফুলছড়া, জেরিন ও কালিঘাট চা বাগানের গিয়ে দেখা যায় সুনশান নীরবতা। শ্রমিকরা বাগানে পাতি উত্তোলন করতে বের যাননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার ৯১টি চা বাগানের শ্রমিকরা আজও কাজে যোগ দেননি। শুধুমাত্র জেলার জেরিন চা বাগানের শ্রমিকরা কাজ করছেন।
ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিক চাঁনমণি দোষাদ দ্য বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীরে বলতে চাই এতোদিন ১২০ টাকা করে মজুরি ছিল। ঠিকাছে আমরা মেনে নিছি। কারণ তখন চাল, ডালেরও দাম কম ছিল। কিন্তু এখন যদি ৩০০ টাকা মজুরি আমাদের দেয়, তাহলে আমরা খেয়ে বাঁচতে পারবো। আমাদের তো এমন সম্পদও নাই। যদি ৩০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয় তবে ছেলে-মেয়েরে একটু হলেও ভালো খাবার, ভালো শিক্ষা, ভালো স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারবো। আমরা চাই, আমাদের মা প্রধানমন্ত্রী মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে টিভিতে ঘোষণা দিক। তাহলেই আমরা কাজে ফিরে যাব।’
চা-শ্রমিকরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর কথা বলে তাদের ধোকা দেওয়া হচ্ছে। তারা এ সিদ্ধান্ত মানেন না। নেতাদের কথা তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নিজে তাদের মজুরি বাড়বেন। প্রধানমন্ত্রী না বলা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে ফিরবেন না।
এর আগে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া চা বাগানে সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি শ্রমিকদের আশ্বাস দেন মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দূর্গাপূজার আগে ঘোষণা দেবেন। তারা যেনো কাজে ফিরে যান।
এদিকে মঙ্গলবার ডিসির আশ্বাসে কিছু কিছু বাগানের শ্রমিকরা কাজে ফিরলেও বুধবার আবারো পুরোদমে কেউ যাননি পাতি উত্তোলনে।
চা বাগানগুলোর মালিক পক্ষ জানিয়েছে, শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে প্রতিদিন লোকশান হচ্ছে প্রায় ২০ কোটি টাকার।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বুধবার দুপুরে বলেন, ‘আমরা সরকার পক্ষের সঙ্গে যে আলোচনা করেছি, তা মানতে চায় না শ্রমিকরা। আমাদের কথা বুঝতে চায় না। শ্রমিকরা এখন আমাদের আওতার বাহিরে চলে গেছে। আমাদের আর কিছু করার নেই। এখন যুবক ছেলেরা আন্দোলন নেতৃত্ব দিচ্ছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া তাদের আটকানো সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান জি এম শিবলী বলেন, ‘শ্রমিকরা কাজে না যাওয়ায় মালিকদের প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। শ্রমিকদেরও ক্ষতি হচ্ছে। তারা কাজে ফিরবে এটাই আমি প্রত্যাশা করছি।’
হামিদ/ মাসুদ
আরো পড়ুন