ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইঁদুরে তছনছ জুম চাষীদের ধান

বান্দরবান প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৫, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৬:০২, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
ইঁদুরে তছনছ জুম চাষীদের ধান

একদিকে অনাবৃষ্টি, অন্যদিকে বান্দরবানের পাহাড়ের জুমক্ষেতে দেখা দিয়েছে ইঁদুরের উপদ্রব। ক্ষেতের আধাপাকা ধান কেটে সাবাড় করে ফেলছে ইঁদুর। আর এতে পরিবারের খাদ্যের যোগান কিভাবে হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে জেলার রুমা, লামা, থানচিসহ বিভিন্ন উপজেলায় জুম ফলন ভালো হয়নি। অন্যদিকে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়ন ও রুমা সদর ইউনিয়নে জুম ক্ষেতে ধানের শীষ ইঁদুরের দল খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে। 

রুমা ও থানচি উপজেলা সীমান্ত রেখার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের রাংদিয়া পাড়ার বাসিন্দা বীর বাহাদুর ও অরসেন ত্রিপুরা বলেন, এবার ঈশ্বর সহায় না হলে পাহাড়ের মানুষদের হাহাকার দেখা যাবে। বিশেষ করে খাদ্য সংকট প্রকোট আকার ধারণ করতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর বাঁশ ঝাড়ে ফুল ও ফল আসার কারণে বেড়েছে ইঁদুরের উপদ্রব। বাঁশের ফুল ও ফল খেয়ে জুম ক্ষেত্রে বিচরণ করা এক একটি ইঁদুরের ওজন হয়ে থাকে প্রায় ১ কেজি। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইঁদুরের উপদ্রপ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের অংসা প্রু মারমা বলেন, ‘অনাবৃষ্টির পর ইঁদুরের কারণে পাহাড়ে খাদ্য সংকট দেখা দেবে।’ 

পাহাড়ে উঁচু জমিতে ধান, তিল, ভূট্টা, মরিচ, শাক, ফল, কুমড়াসহ নানা ধরনের সবজি চাষ করেন জুম চাষিরা। কৃষকরা পাহাড়ে জুম চাষের মাধ্যমে সারা বছরের ধান সংগ্রহ করে রাখেন। 

স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, পাহাড়ের ৯৫ শতাংশ মানুষ জুম চাষে নির্ভরশীল। সুতরাং জুম ধান ভাল না হওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়বে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পরিবার। ইতোপূর্বে ২০১২ সালে বান্দরবানের থানচি, রুমা, রাঙামাটির সাজেক, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি উপজেলায় এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে বান্দরবানের থানচির দুর্গম রেমাক্রি, তিন্দু, ছোট মদক, বড় মদক ও সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেস্ট; মূলত এসব এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এসব এলাকায় ত্রিপুরা, ও মারমা সম্প্রদায়ের বাস। 

জেলার রুমা উপজেলার মুয়ালপি ব্লকে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাওন চৌধুরী জানান, রুমার প্রাংসাপাড়া, সানাপ্রু পাড়া, ক্যাতুই পাড়া, বাচরাং পাড়া, হ্যাপিহিল পাড়া, আর্তা পাড়া, মুনন্নম পাড়ার ১৮০ পরিবার ইঁদুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।  আনুমানিক ৭০ হেক্টর জুম ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ হয়েছে। তবে স্থানীয়দের তথ্য মতে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাবে।

সর্বশেষ ২০১২ সালে ইঁদুর ও বন্য শুকুরের আক্রমণে প্রত্যাশা অনুসারে জুম চাষাবাদ না হওয়ায় বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম রেমাক্রী, তিন্দু ও সদর ইউনিয়নের আদিবাসী জুমিয়া পরিবারগুলোতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়।

রুমা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান বলেন, আমি মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ইঁদুর নিধনের জন্য কৃষকদের পরমর্শ দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছেছ।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ৮ হাজার ৭৪৭ হেক্টর জমিতে জুমচাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪২৯৭ মেট্রিক টন।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনাবৃষ্টি ও ইঁদুরের কারণে এবার জুমচাষে বেশি ক্ষতি হয়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জুম চাষে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেই বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন, আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। সব তথ্য হাতে আসলে পরিষদ থেকে কৃষকদের সহায়তা প্রদান করবে।’ 

বাসু দাশ/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়