ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অনিশ্চিত জীবন ৪ শিশুর, অসহায় দিনমজুর বাবা   

বাগেরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ২১:৫০, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
অনিশ্চিত জীবন ৪ শিশুর, অসহায় দিনমজুর বাবা   

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা । জীর্ণশীর্ণ ঘরে ঢুকেই চোখে পড়ে এক খাটে চার শিশু। সবচেয়ে ছোট ছেলেশিশু পেঁপে দিয়ে থালায় ভাত খাচ্ছে। পাশে বসা আরও তিন শিশু ও দিনমজুর বাবা। সকলের চোখেমুখে অসহাত্বের ছাপ। একে অপরের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ১১ মাস বয়সী ছোট্ট শিশু সুমি দুধের জন্য কান্না করছে। এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার রুইয়ার কুল গ্রামে ক্যান্সারে মারা যাওয়া ঝর্না বিশ্বাসের বাড়ির এ অবস্থা।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রুইয়ারকুল এলাকার শান্তিরঞ্জন ব্রক্ষ্মার ছেলে সুদাশ ব্রক্ষ্মা ১৩ বছর আগে পাশের গ্রামের রাজেশ্বর বিশ্বাসের মেয়ে ঝর্ণা বিশ্বাসকে বিয়ে করেন। দিনমজুর হলেও স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে শান্তিতে কাটছিল সুদাশ বিশ্বাসের দিন। ১৩ বছরে চার সন্তানের বাবা-মা হন সুদাশ-ঝর্না দম্পতি। বড় সন্তান সজল ব্রক্ষ্মার বয়স ১১, পরের জন স্বর্ণালী ব্রক্ষ্মার ৭, তার পরে সকাল ব্রক্ষ্মার বয়স ৪ এবং সব থেকে ছোট সুমি ব্রক্ষ্মর বয়স ১১ মাস। দূরারোগ্য ব্যধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চার সন্তান ও স্বামী সুদাশকে রেখে মাস দেড়েক আগে মারা যায় ঝর্ণা বিশ্বাস।

ছন্নছাড়া হয়ে যায় সুদাশ ও তার সন্তানদের জীবন। স্ত্রী না থাকায় শিশু বাচ্চাদের ফেলে ঠিকমত কাজেও যেতে পারেন না তিনি। খেয়ে-না খেয়ে দিন যায় তাদের। এই অবস্থায় ছোট চার শিশুকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন দিনমজুর সুদাশ ব্রক্ষ্মা।

সুদাশের বড় ছেলে ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া সজল ব্রক্ষ্মা বলেন, ‘সকালে উঠে ভাই-বোনদের জন্য রান্না করি। এর সঙ্গে তাদের খাওয়ানো, গোসল করানোসহ নানা কাজ করতে করতে দিন যায় আমার। ক্লাস ফাইভে পড়তাম। মা মারা যাওয়ার পর আর স্কুলে যেতে পারি না। আমি স্কুলে গেলে ছোট ভাই-বোনদের কী হবে?’

সজলের বোন প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া স্বর্ণালী ব্রক্ষ্মা বলেন, ‘মা মারা যাওয়ার পরে ছোট বোন সুমি আমার কাছে থাকে। আমার কাছ থেকে মোটেও যেতে চায় না। থালা-বাটি ধোয়া ও অন্যান্য কাজ করার সময়ও সে আমার পাশে থাকে। মা তো আর আমাদের মাঝে নেই, কী করব আমরা?’ 

সুদাশের প্রতিবেশী পুতুল বিশ্বাস বলেন, ‘ঝর্ণা দিদি অনেক ভালো ছিলেন। হঠাৎ করে মারা যাওয়ায় খুব করুণ অবস্থা তার সন্তানদের। ঘরে খাবার নেই। টাকা-পয়সাও নেই। আমরা কোনোরকম সাহায্যে করি। এ ছাড়া বাড়ির চারপাশে পানি, কখন কী ঘটে।’

স্থানীয় সুকুমার ব্রক্ষ্মা বলেন, ‘খুব অসহায় একটা মানুষ সুদাশ। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে আরও বেশি সংকটে পড়েছে। ধার-দেনা হয়ে চিকিৎসা করিয়েও বাঁচাতে পারেনি স্ত্রীকে। এখন চার সন্তান নিয়ে কীভাবে বাঁচবে জানি না।’

সুদাশ ব্রক্ষ্মা বলেন, ‘তিন শতক জায়গার উপর আমার বাড়ি। বাড়ির চারপাশে অন্য লোকের মাছের ঘের। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে তেমন কাজে যেতে পারি না। কারণ আমি কাজে গেলে বাচ্চাদের দেখবে কে? স্ত্রী মারা যাওয়ার ৪৫ দিনে ১০ দিনও কাজ করতে পারিনি। তার চিকিৎসা করাতে বেশ ঋণও হয়েছি। এখন খুবই খারাপ অবস্থা।’

এ বিষয়ে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা বলেন, খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে খাদ্য সহায়তা এবং শিশুদের জন্য দুধ কিনে দেওয়া হয়েছে। তাদের একটি ভিজিডি কার্ড করে দেওয়া হবে। স্থানীয়দেরও পরিবারটির পাশের দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন তিনি। 
 

টুটুল/বকুল 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়