ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

সম্ভাবনাময় পান চাষে নেই কৃষি বিভাগের সহায়তা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১২:৫৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২
সম্ভাবনাময় পান চাষে নেই কৃষি বিভাগের সহায়তা

পানের বরজে কাজ করছেন এক কৃষক

দেশের সর্ব উত্তরের কৃষি নির্ভর জেলা পঞ্চগড়। কৃষি অর্থনীতিতে দিন দিন চাঙ্গা হয়ে উঠছে জেলাটি। চা, কমলার মতো বাণিজ্যিকভাবে এই জেলায় চাষ হচ্ছে পান। এখানকার উৎপাদিত পান সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ইতোমধ্যে পানের বরজ করে জীবনমান বদলেছেন দুই শতাধিক চাষি। 

এদিকে সম্ভাবনাময়ী এই দীর্ঘমেয়াদী ফসলটি প্রায় তিন দশক ধরে চাষ হয়ে আসলেও তেমন পরিচিতি পায়নি। চাষিদের অভিযোগ, পান চাষের পরিধি বাড়াতে নেই সরকারি উদ্যোগ। এছাড়া বিভিন্ন সমস্যায় কৃষি বিভাগের কোনো সহায়তা ও পরামর্শও পাওয়া যায় না। 

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, পঞ্চগড় জেলায় পানের বরজ রয়েছে ১৪ হেক্টর জমিতে। সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পান চাষ করেন কৃষকরা।

সরেজমিনে হাড়িভাসা ইউনিয়নের নালাগঞ্জ, জিন্নাতপাড়া, পাহাড়বাড়ি ও ঘাগড়াপাড়া গ্রামে গিয়ে ছোট-বড় শত শত পানের বরজের দেখা মেলে। এসব বরজের ভেতরে সারি সারি পানের গাছ যেমন সৌন্দর্য বর্ধন করছে, তেমনি এসব পান বিক্রি করে অর্থনীতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

পঞ্চগড়ের একটি পানের বরজ

চাষিরা জানান, এখানকার উৎপাদিত পানের কদর থাকায় বাজারজাত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এই পান কিনতে সপ্তাহের শুক্রবার ও মঙ্গলবার ভোরে হাড়িভাসা বাজারে ছুটে আসেন বিভিন্ন জেলার পাইকাররা।

নালাগঞ্জ গ্রামের চাষি জসিম উদ্দীনের পানের বরজ এক বিঘা জায়গা জুড়ে। ২০ বছরের পুরনো এই বরজই তার পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস। প্রতি বছর বরজ পরিচর্যাসহ সব খরচ বাদ দিয়েও তার আয় ছিল এক থেকে দেড় লাখ টাকা। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন কমে এসেছে লাভের পরিমাণ। এর বাইরেও কিছু সমস্যার কথা জানালেন তিনি।

জসিম উদ্দীন বলেন, ‘পানের বিভিন্ন রোগ-বালাই দেখা দেয়। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে না পারায় অনেক সময় কার্যকরী বালাইনাশক প্রয়োগ করতে পারি না। এজন্য আমাদের কৃষি বিভাগের পরামর্শ প্রয়োজন হয়। অথচ কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তা আমাদের এখানে আসেন না।‘

রমজান আলী নামের অপর চাষি বলেন, ‘পান লাভজনক আবাদ। তবে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। আমাদের উৎপাদিত পান দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত হলেও পঞ্চগড় জেলা শহরে আমরা পান বিক্রি করতে পারি না। এখানকার স্থানীয় বাজার দখল করেছে রাজশাহী অঞ্চলের পান। আমদানি নির্ভরতা কমানো গেলে বরজ পানের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের নেক দৃষ্টি প্রয়োজন।’ 

কৃষক জাকির হোসেন বলেন, ‘এখানে পান চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বরজ করার শুরুটা ব্যয়বহুল। ফলে অনেকের আগ্রহ থাকলেও পান চাষ করতে পারছেন না। যদি আগ্রহী চাষিরা সরকারি সহযোগিতা পায় তাহলে পান চাষের পরিমাণ বাড়বে এবং অর্থনৈতিকভাবেও পঞ্চগড় জেলা সমৃদ্ধ হবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দীন বলেন, ‘পঞ্চগড় কৃষি বিভাগে জনবল সংকট রয়েছে। যেসব উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছেন তাদের কর্ম পরিধি বেড়ে যাওয়ায় অনেক সময় কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে কৃষকেরা মুঠোফোনেও যোগাযোগ করে বিভিন্ন পরামর্শ পেতে পারেন।’ 

তিনি আরও বলেন, আমরা খোঁজ খবর নিয়ে পান চাষিদের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

আবু নাঈম/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়