ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাগেরহাটে আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দি

বাগেরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৫:২৫, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
বাগেরহাটে আড়াই হাজার পরিবার পানিবন্দি

বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে অনেক বাড়িতে

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত তিনদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি আর নদীর জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বাগেরহাট সদর উপজেলার তিনটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া জেলার মোরেলগঞ্জ ও শরনখোলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের দু’হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। ওইসব এলাকার পুকুর ও মাছের ঘের ভেসে গেছে।  

মোংলা ও রামপাল উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ তাদের বেড়িবাঁধের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। 

এদিকে বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীতে জোয়ারের পানির চাপ অব্যাহত থাকলে আরো বেশি পরিমাণে মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছে মৎস্য বিভাগ। তবে এই বৃষ্টিতে চলতি রোপা আমন ধানের উপকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

তৃতীয় দিনের মতো উচ্চ জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের বিস্তৃীর্ণ এলাকা ও করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি তলিয়ে গেছে। 

পূর্ব সুন্দরবনের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, গত তিনদিন ধরে জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের বিস্তৃীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুন্দরবনের প্রধান প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কমরজলে পানির উচ্চতা ছিল চার ফুট। সম্প্রতি সময়ে নদীতে যেহারে পানি বাড়ছে তাতে সুন্দরবনের প্রাণিরা হুমকির মুখে পড়েছে। বনের বাঘ, শুকর, হরিণ, বানর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এই প্রাণিদের রক্ষায় সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। 

সুন্দরবনের প্রতিটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে

বাগেরহাট কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় বাগেরহাট জেলাজুড়ে রোববার সকাল থেকে থেমে থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। জেলায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে ফকিরহাট উপজেলায় একদিনে সর্বোচ্চ ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি জমে বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শীতকালিন সবজিক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। দ্রুত এই পানি নেমে না গেলে চাষিদের ক্ষতি হবে। তবে বৃষ্টিতে রোপা আমন ধানের দারুণ উপকার হচ্ছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘জেলায় ইতোমধ্যে ৮৭ ভাগ জমিতে রোপা আমন ধান রোপণ শেষ হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় চলতি মৌসুমে ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।’ 

বাগেরহাট (মোরেলগঞ্জ–শরনখোলা) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন বলেন, ‘মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরণ, বহরবুনিয়া, ঝিউধারা ও চিংড়াখালীসহ মোরেলগঞ্জ সদর ও শরনখোলা উপজেলার দুই হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। এছাড়া জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়তে বলেছি। প্রয়োজনে তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।’ 

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘মোরেলগঞ্জের পৌরসভা অংশে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। ওই অংশে নদীতীর প্রতিরক্ষার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নদীতীর সংরক্ষণের কাজ চলতি অর্থ বছরে শুরু করা হবে।’ 

হাটু পানিতে  তলিয়ে রয়েছে বাগেরহাটের একটি স্কুলের খেলার মাঠ

তিনি আরও বলেন, ‘জোয়ারের পানি রোধ করতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার জন্য ৯৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। এরজন্য চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তার সমীক্ষা খুব শিগগির শুরু হবে। ওই বাঁধ নির্মিত হলে রামপাল ও মোংলা উপজেলারও জোয়ারের পানি প্রতিরোধ হবে। এছাড়া বাগেরহাট সদরের জোয়ারের পানি ঠেকাতে জাইকার অর্থায়নে নদীতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মান কাজ খুবশিগগির শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।’

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ার ও বৃষ্টিতে বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলা উপজেলার নদী তীরবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কয়েকশ পরিবার সাময়িকভাবে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।  এসব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা তৈরি করতে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা তৈরির পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।’ 

টুটুল/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়