ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এসএসসি দিচ্ছেন স্বামী-স্ত্রী

নাটোর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৬:২৭, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
এসএসসি দিচ্ছেন স্বামী-স্ত্রী

বাড়িতে বসেই একসঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন ফজলুর ও মর্জিনা

শিক্ষার কোনো বয়স নেই। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর মনোবলই পারে সব বাধাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগাতে। মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা স্বপ্নকে জাগিয়ে তুলতে পারলেই যেকোনো সাফল্যই অর্জন করা সম্ভব। তাই বয়সকে তুচ্ছ করে শিক্ষা অর্জনে একসঙ্গে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খামারনাচঁকৈড় মহল্লার সাবেক কাউন্সিলর মো. ফজলুর রহমান (৪০) ও তার স্ত্রী মোছা. মর্জিনা বেগম (৩০)। 

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) গুরুদাসপুর উপজেলা পৌর সদরের বেগম রোকেয়া গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তারা।

ফজলুর রহমান ও তার স্ত্রী মোছা. মর্জিনা বেগম দু’জনই উপজেলার বিয়াঘাট কারিগরি কমার্স কলেজের ভোকেশনাল শাখার ২০২২ সালের শিক্ষার্থী।

পরীক্ষার্থী ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৪০ বছর। আমার স্ত্রীর বয়স প্রায় ৩০ বছর। আমাদের সংসারে একটি মেয়ে ও একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। দীর্ঘদিন পর আমরা দুইজন সিদ্ধান্ত নেই আমরা আবার পড়াশোনা শুরু করবো। পরে দুজনই একই সাথে বিয়াঘাট কারিগরি কমার্স কলেজে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘নিয়মিত স্কুলে যেতে না পারলেও বাড়িতে দুইজন পড়াশোনা করতাম। করোনার কারণে প্রথমে পরীক্ষা না হলেও ২০২২ সালে এসে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্টিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা ছিল। আমরা দুইজন একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছি। আমাদের পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে। আগামী শনিবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ 

উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের স্বপ্ন দেখছেন ফজলুর ও মর্জিনা

ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেছি উল্লেখ করে ফজলুর রহমান বলেন, ‘সাধ্যমত চেষ্টা করবো উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করার। ৫ বছর কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করে সাধারণ মানুষের সেবা করেছি। অনেক জায়গায় ঘুরেছি। দেখেছি যারা নিরক্ষর তাদের কষ্ট এবং তাদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত। আমি এসএসসি পাশ করার পর ডিপ্লোমা কোর্স করবো আমার স্ত্রীকেও করাবো। একসময় আমার ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে গর্ববোধ করবে তাদের বাবা মাও শিক্ষিত।’

ফজলুর রহমানের স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমি ২০০৯ সালে পড়াশোনা বাদ দিয়েছিলাম। আমার স্বামীর আগ্রহে দুজন পরামর্শ আবার নতুন করে শুরু করেছি। দুইজন এক সঙ্গে বাড়িতে পড়াশোনা করে একসঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার খুব ভালো লাগছে। আমরা আরও অনেক পড়াশোনা করতে চাই।’

গুরুদাসপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘এই বয়সে এসেও তাদের (ফজলুর ও মর্জিনা) পড়াশোনার প্রতি যে আগ্রহ আছে তা প্রশংসনীয়। দেশের প্রতিটি নাগরিকের শিক্ষা গ্রহণ করা অতি জরুরি।’

আরিফুল/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ