ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

৩৫ বছর লাশ টানা হাশেম এখন নিজেই জীবন্ত লাশ 

নাটোর প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২  
৩৫ বছর লাশ টানা হাশেম এখন নিজেই জীবন্ত লাশ 

দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর তিন থানা এলাকা থেকে নিজ ভ্যানে লাশ নিয়ে মর্গে পৌঁছে দিয়েছেন হাশেম (৬০)। বিচিত্র ধরনের লাশ টেনেছেন। লাশ ধুয়েছেন, আবার কবরও দিয়েছেন। শ্মশ্মানে নিয়ে গেছেন।  

লালপুর, বড়াইগ্রাম আর বাগাতিপাড়া থানা এলাকায় লাশের সন্ধান হলেই তাকে ফোনে ডেকে নিতেন পুলিশ। দীর্ঘদিন লাশ টানার কারণে তার নাম হয়ে যায় ‘লাশ টানা হাশেম’। অথচ এখন সেই হাশেমই যেন এক জীবন্ত লাশ।

নাটোরের লালপুর উপজেলার কচুয়া কারিগরপাড়া গ্রামের আবু বক্কর প্রামাণিকের ছেলে হাশেম প্রামাণিক একটি সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকে নিশ্চল জীবন-যাপন করছেন।

হাশেম জানান, ২৫ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন। বিয়ের আগে স্থানীয় বিভিন্ন চা-স্টলে খড়ি সরবরাহ করতেন। বিয়ের পর দাদার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কেনেন একটি ভ্যানগাড়ি। বিয়ের ১৪ দিন পর থেকেই লালপুর, বড়াইগ্রাম আর বাগাতিপাড়া থানা পুলিশের ডাকে লাশ বহনের কাজ শুরু করেন।

পারিবারিক জীবনে দুই ছেলে আর তিন মেয়ের বাবা হাশেম। সবাইকেই বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে শুকুর আর গাফ্ফারও ভ্যান চালায়। তারা পৃথক খায়। স্ত্রীর এক চোখ অপারেশনের পর অনেক দিন থেকেই সে অসুস্থ। এখন মাত্র এক চোখে দেখেন। ওই অবস্থায়ও তার লাশ টানা আয় দিয়ে চলতো সংসার।

নিজস্ব সম্পত্তি বলতে তার ছিলো ১৮ কাঠা আবাদি জমি, আর ৩ কাঠা জমির ওপর বাড়ি। এ নিয়েই সন্তুষ্টচিত্তে চলছিলো তার জীবন। কিন্তু হঠাৎ এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি এখন নিজেই নিজের বোঝা।

হাশেম জানান, গত ১৫ জানুয়ারি লালপুরের মালঞ্চি বাজার ক্রস করার সময় ইঞ্জিনচালিত ভ্যানের ধাক্কায় তার ভ্যানটি উল্টে তার পায়ের হাড় ভেঙে যায়। ওই গাড়ির সামনের দুটি রড নাটসহ তার পায়ের মাংসের ভেতর চলে যায়।  নিজের চামড়ায় ঝুলে থাকা ভাঙা পা নিজ ভ্যানে উঠিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে যান। এরপর তাকে রাজশাহীর পর ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পর পর দুইবার অপারেশন করতে তার ওই ১৮ কাঠা জমি ও বাড়িতে পালন করা দুইটি বাছুর বিক্রি করতে হয়েছে। এখন তার মাত্র বাড়ির ৩ কাঠা জমি রয়েছে। আগামী ২০ দিন পর তার আরও একটি অপারেশন হওয়ার কথা রয়েছে। অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা, সংসারের খাওয়া খরচের পাশাপাশি ওই অপারেশনের টাকা জোগাড় কীভাবে হবে, এ নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর মাঝে মাঝে তার দুই ছেলে কিছু সহযোগীতা করে। এছাড়া ওই দুই থানা থেকে সামান্য কিছু টাকা পাঠিয়েছিলো। এমন অবস্থায় ৩৫ বছর লাশ টেনে নিজেই এখন জীবন্ত লাশের মতো বাড়িতে অসহায় জীবন যাপন করছেন। অপারেশন ছাড়াও তার প্রতিদিন ৭-৮শ টাকার ওষুধ লাগে।  তিনি তার চিকিৎসার খরচ জোগাড়ে প্রশাসনসহ সমাজের হৃদয়বান ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।

/টিপু/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়