ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ওয়ালটন এমডির কাছ থেকে স্মার্টফোন পেয়ে সাফজয়ী ইতির মায়ের চোখে আনন্দ অশ্রু

মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৮:৩২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২
ওয়ালটন এমডির কাছ থেকে স্মার্টফোন পেয়ে সাফজয়ী ইতির মায়ের চোখে আনন্দ অশ্রু

জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক ইতি রানি মণ্ডলের পরিবারকে একটি স্মার্টফোন দিয়েছে ওয়ালটন

সাফ উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক মাগুরার মেয়ে ইতি রানি মণ্ডল। নারী ফুটবলারদের সাফল্যে সারা দেশে উৎসব চলছে। অথচ, একটি স্মার্টফোন না থাকায় ইতির বাবা মনোজিৎ কুমার মণ্ডল ও মা উন্নতি রানি মণ্ডল মেয়েকে একনজর দেখতে পারছিলেন না। এমনকি তার সঙ্গে ফোনে কথাও বলতে পারছিলেন না।

ইতির মা-বাবার এই আক্ষেপের খবর প্রকাশিত হয় জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমে। ‘বড় ফোন নাই যে ইতি মনিরে একনজর দেখব’ শিরোনামের সচিত্র প্রতিবেদনটি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

ইতি রানি মণ্ডলের পরিবারকে একটি ওয়ালটন স্মার্টফোন দেওয়ার জন্য মাগুরা ওয়ালটন প্লাজার শোরুম ইনচার্জ এস এম মিজানুর রহমানকে নির্দেশ দেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি‘র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও গোলাম মুর্শেদ।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের গোয়ালদহ গ্রামে ইতি রানি মণ্ডলের বাবা-মায়ের হাতে ওয়ালটনের জনপ্রিয় মডেল প্রিমো এইচএম-৭ স্মার্টফোন তুলে দেওয়া হয়। নতুন স্মার্টফোন হাতে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন ইতির মা উন্নতি রানি মণ্ডল।

এ সময় ইতির ফুটবল শেখার আঁতুরঘর গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও ফুটবল প্রশিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম এবং রাইজিংবিডি ডটকমের মাগুরা জেলা প্রতিনিধি শাহীন আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন।

উন্নতি রানি মণ্ডল বলেছেন, ‘আমাগেরে যারা বড় ফোন দিয়ে গিলো, ভগবান তাগেরে মঙ্গল করুন। তাগেরে অনেক উন্নতি করে দিক। আমি এহন আমার মনিরে যহন খুশি তহন দেখতি পারব। আমার মনি বিদেশে খেলতি গিলি আমি দেখতি পারব।’

ইতির বাবা মনোজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘মেয়ের জন্যি এত ইজ্জত পাবো, কল্পনা করি নাই। কেউ নতুন বড় মোবাইল ফোন বাড়ির পর আসে বিনা পয়সায় দিবি, এহনো বিশ্বাস হচ্ছে না। সব ভগবানের ইচ্ছা। ওয়ালটন কোম্পানিরে ভগবান আরও দিক। আমি তাগেরে ধন্যবাদ জানাই।’

মাগুরা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম গোয়ালদহ। শ্রীপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এই গ্রামের ইতি রানি মণ্ডল (১৬) এবার সাফজয়ী বাংলাদেশ ফুটবল দলে ছিলেন। নিভৃত গ্রামে হলেও ইতির বাড়িতে যেতে বেগ পেতে হয়নি। ফুটবলার ইতিকে গ্রামের সবাই একনামে চেনে। বাড়ি বলতে জরাজীর্ণ টিনের ঘর। বৃষ্টিতে পানি পড়ে। এই ঘরেই বড় হয়েছেন ইতি। ঘরের ভিতর সাজানো ক্রেস্ট, মেডেল ও ট্রফি। এসবই ইতির সাফল্যের স্মারক।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গোয়ালদহ গ্রামে ইতিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গৃহস্থালির কাজ করছেন তার মা উন্নতি রানি মণ্ডল। বাংলাদেশ জেতায় তিনি ভীষণ খুশি।

বাড়ির উঠানো অনেকগুলো চেয়ার। ১০-১২ জন বসে আছেন। তারা ইতির বাড়ি দেখতে এসেছে। তার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলছেন। অভিনন্দন জানাচ্ছেন। আত্মীয়-স্বজন অনেকে মিষ্টি ও ফল নিয়ে বেড়াতে এসেছেন।

ইতি বড় হয়েছেন দরিদ্র পরিবারে। শুরুর দিকে মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে এলাকার লোকজন নেতিবাচক কথা বললেও এখন সবাই তার পরিবারের সদস্যদের প্রশংসা করছেন।

ইতি রানি মণ্ডলের বাবা মনোজিৎ কুমার মণ্ডল ভ্যানচালক। পাশাপাশি ডেকোরেটরের দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ২০ শতক জমিতে ছোট দুটো টিনের ঘর আছে কেবল। আবাদি জমি নেই। ভ্যান চালিয়ে ও দিনমজুরের কাজ করে চার মেয়ের মধ্যে তিনজনকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে ইতি রানি মণ্ডল এখন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্য।

মাগুরা/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়