ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দালাল-বিক্রয় প্রতিনিধিতে অবরুদ্ধ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

শফিকুল ইসলাম শামীম, রাজবাড়ী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৮:৩৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
দালাল-বিক্রয় প্রতিনিধিতে অবরুদ্ধ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকিট কাউন্টার তখনো ফাঁকা। তবে হাসপাতালের বাইরে ছিল চিকিৎসা নিতে আসা শিশু-নারী ও পুরুষের ভিড়।

শুধু রোগীদের ভিড় নয়, তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন সুদর্শন কিছু যুবক। সবাই খুব পরিপাটি এবং কাঁধে ব্যাগ রয়েছে। এদের বেশিরভাগই বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধি ও দালাল।

কিছুক্ষণ পরে হাসপাতালে একজন ডাক্তার আসেন। মুহূর্তেই তার দিকে এগিয়ে যান বিক্রয় প্রতিনিধিরা। সবার হাতেই ঔষধ, কলম ও প্যাড। তাদের ভিড়ে কোনও রোগী ডাক্তারের রুমে প্রবেশ করার সুযোগ পাননি। ডাক্তারও দিব্বি সময় দিচ্ছেন তাদের।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ খুবই নোংরা। যদি কোনও সুস্থ মানুষ টয়লেটে যায়, সে অসুস্থ হয়ে যাবে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, ডাক্তারের জন্য নির্ধারিত চেয়ারটি ফাঁকা। তবে রুমের মধ্যে একাধিক নারী-পুরুষ পায়চারি করছেন। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে, রোগীর সঙ্গে আসা লোকজন। তবে এরা কেউই রোগীর আপনজন নয়। এরা দালাল, জরুরি বিভাগে কোনও রোগী এলে তাদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানোই এদের কাজ। রোগী প্রতি কমিশন পান তারা।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হলে সহজে বেড পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে মেঝেতে বেড বিছিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে। মাঝে মধ্যে নার্সরা এসে দেখে যান। এক সপ্তাহ কেটে গেলেও সিট বদলানো হয় না। এছাড়া হাসপাতাল থেকে দেওয়া খাবার খুবই নিম্নমানের।

হাসপাতালের সামনের এক চায়ের দোকানদার বলেন, ‘এই হাসপাতালে কোনও চিকিৎসা হয় না। পাঁচ জন রোগী আসলে চার জনকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই হাসপাতালের চেয়ে অনেক পরিষ্কার পাশের পশু হাসপাতাল।’

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ আমিরুল হক বলেন, ‘হাসপাতালে জনবল সংকট রয়েছে। তবে চিকিৎসাসেবার মান বাড়াতে শূন্য পদ পূরণে চাহিদা পাঠানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, হাসপাতালটি অনেক পুরাতন। জনবল সংকট থাকায় নিয়মিত পরিষ্কার করা যায় না। এছাড়া মানুষের অভ্যাসগত কিছু সমস্যা রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

হাসপাতালে দালাল ও ঔষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘উপজেলায় প্রাইভেট হাসপাতালগুলো উন্নত থাকলে দালালের সংখ্যা আরও বাড়ত।’

কেআই

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়