ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

লাভ-লোকসানের হিসাব কষছেন রাজশাহীর প্রতিমা শিল্পীরা

শিরিন সুলতানা কেয়া, রাজশাহী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২  
লাভ-লোকসানের হিসাব কষছেন রাজশাহীর প্রতিমা শিল্পীরা

প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন কারিগররা

বছরের অন্যান্য সময় প্রতিমা শিল্পীদের কাজ কম। তাই তারা দিন গুনছিলেন শারদীয় দুর্গোৎসবের। ভেবেছিলেন, দেবী দূর্গার প্রতিমা বানিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। কিন্তু লাভ নয়, টিকে থাকার হিসাব কষতে হচ্ছে তাদের। মাথায় খরচের হিসাব কষতে কষতে দেবী দূর্গাকে সাজিয়ে তোলার শেষ মূহূর্তের কাজ করছেন রাজশাহীর প্রতিমা শিল্পীরা।

শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনী বার্তা ইতোমধ্যে বেজেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসব বরণ করে নিতে চলছে নানা আয়োজন। চলছে মণ্ডপ সাজানোর কাজও। সবাই যখন উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখনও হাসি নেই প্রতিমা শিল্পীদের। প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের অংক অনেকটাই কম হবে তাদের। তাই করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন না তারা।

রাজশাহীর পালপাড়া ঘুরে দেখা যায়, মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের হাতের ছোঁয়ায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে প্রতিমাগুলো। কারিগরেরা দেবী দূর্গার সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলছেন রং-তুলির আচঁড়ে। 

কয়েকজন প্রতিমা শিল্পী জানান, সারা বছর তাদের হাতে তেমন বড় কাজ থাকে না। বছরের অন্য সময় লক্ষ্মী, কালীর মতো প্রতিমা তৈরি করলেও তারা অপেক্ষা করেন দেবী দূর্গার আগমনের। লাভের আশায় বুক বেঁধে থাকেন। তবে এবার তেমন লাভ কিছু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মৃৎশিল্পীরা।

তারা জানান, প্রতিমা তৈরির উপকরণ মাটি, রং, বাঁশ, আউড়, গয়না, শাড়িসহ প্রতিটি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পরেছেন প্রতিমা শিল্পীরা। কারখানায় চুক্তিভিত্তিক কারিগরদেরও দিতে হচ্ছে বেশি টাকা। সেই তুলনায় প্রতিমার দাম বেশি নেওয়া যায়নি। এ বছর অনেক কারিগরদের প্রতিমা তৈরির কাজ ফিরিয়েও দিতে হয়েছে।

রাজশাহীর প্রতিমা তৈরির কারিগর কার্তিক চন্দ্র পাল ২৬ বছর ধরে এ পেশায় আছেন। পূজা শুরুর কয়েক মাস আগে থেকে ব্যস্ত সময় পার করতে হয় তাকে। প্রতিবছর তিনি ৩৫ থেকে ৪০টি প্রতিমা তৈরির কাজ করলেও এবার ২৩টির কাজ করছেন।

কম প্রতিমা তৈরির কারণ জানতে চাইলে কার্তিক চন্দ্র পাল বলেন, ‘মে মাস থেকে প্রতিমা তৈরি করছি। তা-ও সংখ্যায় কম। সব জিনিসপত্রের দাম বেশি। প্রতিমা তৈরির গয়না ও শাড়ি ভারত থেকে আনতে হয়। এতে খরচ বেশি পড়ে যায়। তারপরও যারা অর্ডার দেন তারা এসব বুঝতে চান না। তাই এবার অন্যবারের চেয়ে অনেক কম কাজ করছি। বেশি কাজ করলেই লোকসান।’ 

কার্তিক পালের সাথে একমত পোষণ করেন নগরীর মিয়াপাড়া এলাকার ধর্মসভা মণ্ডপের কারিগর গনেশ কুমার পাল। তিনিও এবার অন্যবারের তুলনায় কম প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। তিনি মোট ২৩টি প্রতিমা তৈরি করছেন। এর মধ্যে মহানগরের ২২টি, বাকি একটি গোদাগাড়ীর।

গনেশ কুমার পাল বলেন, করোনার সময় থেকে কাজে ভাটা পড়েছে। সবকিছুর দাম বেশি হলেও প্রতিমার দাম কম। করোনার সময় অর্ডার কম ছিল। এবার অর্ডার বেশি হলেও লাভের অংকটা কম। প্রতিটি জিনিসের দাম অনেক বাড়তি। যেখানে অমাদের প্রতিমা প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ থাকতো, সেখানে এবার ২ থেকে ৩ হাজার থাকছে। কিছু প্রতিমার ক্ষেত্রে খরচ আর মূল্য সমান হতে পারে, কোনটিতে হতে পারে লোকসান। কাজ শেষেই প্রকৃত হিসাব বোঝা যাবে।

নগরীর গণকপাড়া এলকার বৈষ্ণবসভা মন্দিরের কারিগর অরুণ পাল বলেন, ‘এবার লাভের অংক খুঁজে পাচ্ছি না। ২৬টি পতিমা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছি। খরচ অনুয়ায়ী লাভ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি গত মে মাস থেকে অর্ডার নিয়েছি। সেই সময় প্রতিমা তৈরির উপকরণের যে দাম ছিল, তার চেয়ে এখন অনেক বেশি। ফলে লসে পড়ে গেছি।’

হতাশার সুরে অরুণ পাল বলেন, যারা আগে অর্ডার দিয়েছেন, তারা এই হিসাব-নিকেশ বুঝবেন না। এবার করোনার সময়ের চেয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ বেশি পেলেও লাভের হিসাব কম।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার ঘণ্টা বেজেছে। আগামী ১ অক্টোবর শুরু হবে মূল পূজা। এরপর আগামী ৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হবে। গত দুই বছর করোনা মহামারির পর এবার একটু ভালোভাবেই উৎসব উদযাপনে এখন চলছে প্রস্তুতি। 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়