ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দোকানঘরে চলছে পাঠদান

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৯, ৪ নভেম্বর ২০২২   আপডেট: ১২:২০, ৪ নভেম্বর ২০২২
দোকানঘরে চলছে পাঠদান

টাঙ্গাইলের বাসাইলে উপজেলার ডুমনিবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ তিন বছরেও শেষ হয়নি। ফলে চরম অস্বস্তিতে দোকানঘরে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। দোকান ঘেঁষে মানুষের আনাঘোনা ও শব্দে পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের শেষের দিকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের ডুমনিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ৬৬ লাখ টাকা ব্যায়ে একতলা ভবনটি নির্মাণের কাজটি পায় কাজী ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ৩০০ দিনের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও শুধুমাত্র বেজ ঢালাই দেওয়া ছাড়া তারা আর কিছুই করেনি।

এদিকে, ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আগে সেখানে থাকা পুরোনো টিনের ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের পাশে একটি ও বাজারের পাশে অপর আরেকটি দোকানঘর ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছোট দুইটি টিনের কক্ষে গা ঘেঁষে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা করানো হচ্ছে। 

শিক্ষার্থীরা জানান, যে দুইটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে তার  একটির পাশে সিমেন্টের দোকান ও অন্যটির পাশে বাজার। মানুষের আনাঘোনা ও বাজারের বিভিন্ন মেশিনের শব্দের কারণে পড়াশোনা করতে ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। শিক্ষার্থীরা দ্রুত ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।  

ডুমনিবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুমি আক্তার বলেন, ‘নতুন ভবন করার জন্য আমাদের আগের টিনের ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এরপর থেকে আমাদের পাঠদান দোকানঘরে চলছে। আমাদের ক্লাসের পাশেই সিমেন্টের দোকান রয়েছে। পাশের দোকান থেকে সিমেন্ট বের করার সময় অনেক ময়লা আসে। দোকানের সার্টার খুলতেই অনেক শব্দ হয়। আর এখানে অনেক গরম। একটি রুমে ৪২জন ছাত্র-ছাত্রী গাদাগাদি করে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। ক্লাসে অনেক শব্দ হয়।’

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার সেতু বলেন, ‘রাস্তা  ও বাজার ঘেঁষে আমাদের ক্লাস রুমটি। এখানে প্রচুর গরম ও শব্দ। মানুষ ও বিভিন্ন মেশিনের শব্দে আমাদের লেখাপড়ায় অনেক সমস্যা হয়। এখানে মন দিয়ে ভালোভাবে পড়তে পারি না। এটা ক্লাস রুমের পরিবেশ না। এখান দিয়ে অনেক মানুষ যাতায়াত করে এজন্য সমস্যা হচ্ছে।’ 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলেয়া আক্তার বলেন, ‘বিদ্যালয়ের নতুন ভবন তৈরির জন্য আমাদের আগের টিনের ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকে দোকানঘর ভাড়া নিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’

বিদ্যালয়ের অপর সহকারী শিক্ষক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি আগে যিনি ঠিকাদার ছিলেন, তিনি কাজটি অন্যজনকে দিয়েছেন। ভবনটির শুধুমাত্র বেজ ঢালাই করা হয়েছে। এরপর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। কাজ শুরুর সময় সেখানে থাকা টিনের ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর আমরা ক্লাস সংকটে পড়ি। এজন্য দুইটি রুম ভাড়া নিয়ে ক্লাস নিচ্ছি।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৯ সালে কাজটির ট্রেন্ডার হয়। এরপর ভবনটির কাজ শুরু হওয়ার কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায়। এখনও কাজ বন্ধ রয়েছে। টিনের ঘরটি ভেঙে ফেলার পর থেকে দুইটি রুম ভাড়া নিয়ে ক্লাস চলছে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত ভবনটি নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’

ভবনটির ঠিকাদার কাজী সুমন বলেন, ‘আমরা যারা ঠিকাদার তারা দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছি। এখন সব নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের দরে কাজ করা কঠিন। একটি বেজ তৈরি করলেও ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ হয়। বেজ ঢালাইয়ের পর বিল পেয়েছি মাত্র দেড় লাখ টাকা। অফিস থেকে তো ১০ লাখ টাকা দিতে পারতেন, কিন্তু তারা বললো- ফান্ডে টাকা নেই।’

টাঙ্গাইলের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রকৌশলী শাহরিয়ার বলেন, ‘দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর আমরা তাদের পেমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকায় রাখা হয়েছে। কাজটি ৩০০ দিনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। দ্রুতই কাজটি শুরু করা হবে।’

কাওছার/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়