ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘জলবায়ুর ক্ষতি ও ঝুঁকি কমাতে সকলকে চেষ্টা করতে হবে’ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০১, ৯ নভেম্বর ২০২২  
‘জলবায়ুর ক্ষতি ও ঝুঁকি কমাতে সকলকে চেষ্টা করতে হবে’ 

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন, ২০১০ সাল থেকে কপ সম্মেলনে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশসহ অনুন্নত দেশগুলো। ২০১০ সালে কপ সম্মেলনে প্রথমে যে দাবিটি তুলে ধরেছিলেন তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কপ সম্মেলনে শুধু এটি আলোচনাই হয়, বাস্তবায়ন হয় না। সুতরাং এখন সময় এসেছে সম্মিলিতভাবে সকলকে এগিয়ে এসে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতি ও ঝুঁকি কমিয়ে আনার চেষ্টা করার। 

সিটি মেয়র বুধবার (৯ নভেম্বর) খুলনা নগরীর রূপসাস্থ কারিতাস মিলনায়তনে দ্বিতীয় উপকূলীয় শিশুদের জলবায়ু সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগ্রত যুব সংঘ-জেজেএস দিনব্যাপী সম্মেলনের আয়োজন করে।

তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খুলনা তথা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে ষাটের দশকে উপকূলীয় অঞ্চলে যেসব বেড়িবাঁধ করা হয়েছিল, সেগুলো কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ কেটে লবণ পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ করার ফলে ধীরে ধীরে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পেতে থাকে। 

খুলনা মহানগরীর জলাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার উন্নয়নে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু ওই অর্থ দিয়ে ড্রেন-রাস্তার উন্নয়ন হলেও যতক্ষণ পর্যন্ত রূপসা নদী খনন করে গভীরতা সৃষ্টি করা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে না। 

সুন্দরবন মায়ের মতো এমনটি উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন, এ দেশে এ পর্যন্ত যতগুলো ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, তা থেকে এ অঞ্চলের মানুষ রক্ষা পেয়েছে সুন্দরবনের কারণে। অথচ এই বন উজাড় করে দিচ্ছে কিছু কু-চক্রী মহল। কিছু অসাধু রাজনীতিকের কারণে বন ধ্বংস হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। যারা বন ধ্বংস করছে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সকলকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান সিটি মেয়র।

সম্মেলনে শিশুদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, শিশুদের এসব দাবির ম্যাসেজ কপ সম্মেলন পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে। সেই ক্ষেত্রে দেশের পক্ষ থেকে যারা কপ সম্মেলনে প্রতিনিধি হিসেবে যাবেন,  তাদের কাছে প্রয়োজনে লিখিত আকারে এসব দাবি তুলে ধরারও আহ্বান জানান তিনি।

জেজেএস’র নির্বাহী পরিচালক এটিএম জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম, ইউনিসেফ খুলনার চিফ ফিল্ড অফিসার মো. কাউসার হোসাইন, শাপলানীড় বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তমুকু উচাইয়ামা, কেএনএইচ বাংলাদেশের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর শুভময় হক ও কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গ্রেটা ফিটগ্যারাল্ড।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বুয়েটের ওয়াটার এন্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিনের প্রফেসর মোহাম্মদ রেজাউর রহমান, ফাউন্ডেশন ফর ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের সদস্য সচিব নাঈম ওয়ারা, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রতিনিধি মাহফুজ আলম, কারিতাস’র আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক দাউদ জীবন দাস, ম্যাক্স ফাউন্ডেশনের এডভোকেসী ম্যানেজার ফয়সাল হোসেন, কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর এমরানুল হক, একশন এইড’র ম্যানেজার মৌসুমী বিশ্বাস প্রমুখ। 

উদ্বোধনী অধিবেশনে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জেজেএস’র ডিরেক্টর প্রোগ্রাম এমএম চিশতি ও শিশু ফোরামের সদস্য পুজা বিশ্বাস।

সম্মেলনে শিশু বক্তারা, শিশুবান্ধব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবেশ ও দেশ উপহার দেওয়ার দাবি জানান। তারা বলেন, বাংলাদেশের যে কোনো দুর্যোগে শিশুদের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে খাদ্য, পানি সংকটসহ সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় সামাজিক দুরবস্থা। এক পর্যায়ে লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হয়। অথচ দেশের পরিকল্পনায় শিশুদের রাখা হয় না। এজন্য তারা দেশের উন্নয়নসহ যে কোনো পরিকল্পনায় শিশুদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানান। আয়োজক সংস্থা জেজেএস’র নির্বাহী পরিচালক এটিএম জাকির হোসেন প্রারম্ভিক বক্তব্যে শিশুদের নিয়ে ভাবেন এমন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করেন।

সম্মেলনে জলবায়ু বিষয়ক ছয়টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সেশনে সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশন অব ডিজাস্টার ফোরাম সদস্য সচিব নাঈম ওয়ারা, ইউনিসেফের খুলনার ফিল্ড অফিসার শাহনাজ বেগম, বুয়েটের প্রফেসর মোহাম্মদ রেজাউর রহমান, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার হেড অব সাব অফিস মাহফুজ আলম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. দিলিপ কুমার দত্ত এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান এন্ড রুরাল ডিসিপ্লিনের হেড প্রফেসর ড. মোস্তফা সারোয়ার।

এ সব সেশনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, শিশুদের নিয়ে ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি সংস্থা ইডুকোর যুব শিশু আমীর হামজা, মো. আব্দুর রহমান, তিথি রানী খান, রাবেয়া সুলতানা, রেজবিনা খানম, তাসফিয়া তাবাসসুম জান্নাতি, মো. আশফিকুর রহমান, জিএম সোহরাওয়ার্দী, মিসেস মনিরা আক্তার, তানাজিল সওগাত, মো. মাসুম তালুকদার, মো. সবুজ শেখ, গৌরাঙ্গ নন্দী, মশিউর রহমান, সুইটি খাতুন, প্রফেসর নাসিফ আহসান ও এমরানুল হক।

সম্মেলনে শিশুদের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবিনামা পেশ করেন মোসা. বৃষ্টি ও মেঘলা আক্তার মোহনা।

নুরুজ্জামান/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ